সমাজ দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। এটাই স্বাভাবিক। আমাদের মনের পরিবর্তন ওই সমাজে গিয়ে পড়ে। তখন ভিন্ন একটি মানুষ তার স্বরূপ দেখতে পায়। এই দেখতে পাওয়া যে, শুধুমাত্র তার চোখ দিয়ে দেখা, তা নয়। আমাদের অভিজ্ঞতায় যে আয়না আমরা তুলে ধরছি তার সামনে, সেটাই তার চোখে ধরা পড়ছে। এই যে পরিবর্তন তা কি নিশ্চিতরূপে আমাদের খোলসটারই রূপ? নাকি এর বাইরেও তার একটা অস্তিত্ব আমরা অনুভব করতে পারি, যা একান্তই কোনও ‘গোষ্ঠী’ বা ‘একক’ বা ‘ব্যক্তিগত’ নয়? এই ‘অস্তিত্ব’ যে দীর্ঘদিনের একটা অভ্যাসে ক্রমে পরিণত হতে পারে, তারও ইঙ্গিত আমরা সে-ই সমাজের বিভিন্ন ভাবনার মধ্যেই পাই। পাই-না কি? যখন আমরা বলি ‘ভালো’ বা ‘মন্দ’ বলে তিরস্কার করি, তখন কি পাই-না তার একটা চলমান ছবি? হয়তো পাই এবং তা আমরা আত্মস্থও করি নিজের অজান্তেই। আমরা ভালো যেমন ভোগ করি তেমন মন্দও তো ভোগ করি একই নিয়মে। এটাই সমাজের একটা দিক—যা আমাদের ভোগলালসা থেকে সরিয়ে রাখে না; তাকে গ্রহণ করতেই, আমাদের অস্তিত্বের সমন্বয় ও সংকট দুই দেখা দেয়।

আমরা যদি মঙ্গল-চিন্তা করি; যা কিছু ‘শুভ’ তাকে আত্মস্থ করার কথা ভাবি, তাহলেও কী একইরকম ভাবে সংকট ও সমন্বয়-সাধন সম্ভব? তাহলে কেউ কেউ প্রশ্ন করতেই পারেন, আমরা ঠিক কী চাই? আমাদের চাহিদাই কী নিয়ন্ত্রণ করে—ওইসব চাওয়া না-চাওয়া? এইরকম সংকটজনক প্রশ্ন আমাদের বিচলিত করে। সব সময় একটা প্রশ্ন-ছায়া যেন আমাদের মাথায় আঘাত করে। এই প্রশ্নের তেমন কোনও উত্তর আমরা খুঁজি কি কখনও? আমাদের কি ‘উচিত’ এই প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে একটা মঙ্গলময় উত্তর পাওয়া? কিন্তু, যদি মানুষ এইসব প্রশ্নের সঙ্গে নিজেকে না জড়িয়ে রাখে, তাহলে? মানব মনের পরিচয় তাঁর চিন্তার মধ্যে ফুটে ওঠে। সে মানুষ বলেই তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আসে। কিন্তু যদি আমাদের এই মন—মানব মনের মঙ্গল চিন্তা না করে? তাহলে? যদি সে তার ‘অস্তিত্ব’ নিয়ে তেমন কোনও পদক্ষেপ না নেয়? তাহলে? তাহলে আমরা মনুষ্যত্বের পরিচয় কীভাবে পাবো? কিন্তু কেউ কেউ তো চিন্তা করেন, এইরকম প্রশ্নের সামনে দাঁড়িয়ে। এই যে নিজেকে তিনি দাঁড় করাচ্ছেন—একটি সংকটের মুহূর্তে, ভাবছেন একটি দূরবর্তী ফলের আশায়, তখনই তো আমরা মনুষ্যত্বের পরিচয় পাই। পাই-না কি?

এইরকম অনেক প্রশ্ন আসবে আমাদের দোরগোড়ায়। সেইসব প্রশ্নর দু-একটি প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে, সমন্বয় আলোচনার একটি প্ৰেক্ষাপট গড়ে তুলতে পারি। যাতে আমরা অংশগ্রহণ করতে পারবো।

সামাজিক যোগাযোগের যে পরিবর্তন, সে পরিবর্তন কীভাবে আমাদের প্রভাবিত করে? এবং ভিন্ন সে-ই মানুষ, তার যে একটা অবচেতন মৌলিক ‘মন’ বা ‘অস্তিত্ব’ গঠনের দাবি সে করে, তা কতটা যুক্তিযুক্ত ও সমন্বয়-সাধ্য এ ব্যাপারে আমাদের কি কখনও কোনও প্রশ্ন তেমন করে জেগেছে আজও? মানুষে মানুষের মধ্যে যে একটা সামাজিক-সম্পর্ক রয়েছে, তা কোথাও জোর করে চাপিয়ে দেওয়ার মতো নয় তো? মানুষ যখন নিজেই নিজের মধ্যে একটি ‘ঐক্য’ গড়ে তোলে, যখন সে নিজের অস্তিত্বকেই নিজের প্রতিপক্ষ মনে করে, তখন আমাদের স্বাভাবিক প্রবৃত্তির ধ্বংস শুরু হয়। এই যে ‘প্রবৃত্তি’র কথা উঠল এবং ‘ধ্বংস’ শব্দটি এল তা মানুষেরই তো ধারণা। সে ধারণায় যেন কোথাও একটা ‘আমি’-কে তুলে ধরা ও আত্মীয়তা গড়ে তোলার একটা মানবিক প্রচেষ্টা রয়েছে। আমরা কখনও তা ভেঙে বেরিয়ে যেতে চাই আবার কখনও ভেতরের দিকে এগিয়ে যেতে চাই। এই যে মানব প্রকৃতিতে একটা অসামঞ্জস্য ও সাম্যের গর্বিত দিক নির্দেশ রয়েছে—তা কি মানুষ নিজে থেকে এর দায়িত্ব নেয়? নাকি এর পিছনে আমাদের সামগ্রিক পরস্পরের সঙ্গে জড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতাকেই নির্দিষ্ট করছে? আমরা কখনও কখনও এও দেখেছি যে, মানুষ নিজের অস্তিত্বের কথা বলে শুধু নিজের অস্তিত্বের কথাই ভাবে না। সে ভাবে সামগ্রিক অস্তিত্বের কথাও। আর এখান থেকেই দেখা দেয় একটি দ্বন্দ্বের অবকাশ। ‘আমি’-র সঙ্গে ‘না-আমি’র এই দ্বন্দ্বে সবসময় যে ‘আমি’ এগিয়ে থাকে তা নয়, কখনও কখনও ‘না-আমি’র দিকেও চলে যায় ধারণাটি। আমরা তখন মানতে বাধ্য হই যে, ‘আমি’র কোনও অস্তিত্বই নেই। তখন কি মনে হয় না, আমরা বিদ্বেষের সম্মুখীন হচ্ছি? এই যে বিদ্বেষের কথা উঠে এল—এও কি তবে আমাদের অস্তিত্বের সংকটের সঙ্গে জড়িয়ে আছে কোথাও? এরকম প্রশ্ন আসাটাই যে স্বভাবিক তা আমরা কখনও কখনও মানতে চাই না। আর তাই আমাদের মনে মানুষের জীবন নিয়ে প্রশ্ন চলে আসে।

আমাদের ‘জীবন’ নিয়ে আমরা কতটা যুক্তিযুক্ত ভাবনার মধ্য দিয়ে এগিয়ে যেতে পেরেছি, এবং জীবনের মূল্য কতটা প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে সাধারণ মানুষের কাছে? যদি ধরে নেওয়া যায় যে, আমরা সে-ই ‘সুখ’ ভোগ করতে চাই—যা আসলে একটি ‘সংকট’ তাহলে হয়তো আমরা আবছা হলেও একটা রাস্তা দেখতে পাবো। মানুষ নিজেই একটি ‘আত্মীয়’ তার নিজের কাছে, এবং সে ভিন্ন একটি মানুষেরও আত্মীয়, যে আত্মীয়তা সাময়িক বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে তার কিছু চাহিদা মেটাতে চায়। আবার যখন আমরা দুঃখ ভোগ করি, তখন সে-ই দুঃখের একটি ভিন্ন রূপও ভিন্ন মানুষের অস্তিত্বের উপর এসে পড়ে। তখন সে তাও গ্রহণও করে। আবার সে যখন সমগ্র বিশ্বের সঙ্গে সমন্বয়সাধন করে, সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি ক্ষণস্থায়ী সুখের জন্য, তা কিন্তু মানবিক মূল্যবোধের বাইরেই থাকে। তখন তার চাওয়া আর আমার চাওয়াকে আলাদা করে বিচার করা যায় না। কারণ ভিন্ন কোনও সত্তার সুখের দিকটি যখন সত্যিই সুখের বলে মনে হয়, তখন সেখানে একটি পৃথক চাহিদার স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট হয়ে গড়ে ওঠে নতুন আরেকটি সম্বন্ধ। এই সম্বন্ধ অর্থনীতি বিভাগের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে বিরক্তিকর হয়ে ওঠে। কিন্তু তাই বলে তাকে অস্বীকার করে এই সমাজ তো আর গড়ে ওঠেনি, আজকে।

মানুষে মানুষে যেমন ভাব-ভালোবাসা আছে তেমন মানুষে মানুষে বিদ্বেষও আছে। কখনও তা জোড়া লাগে আবার কখনও তা ছিন্ন হয় সামান্য আঘাতে। আর এর থেকে জন্ম নেয় হতাশা। তখন সে সরে আসে আত্মীয়তা থেকে ভিন্ন একটি বৃত্তে। এই যে একটি ভিন্ন বৃত্ত গড়ে উঠল, সমাজে প্রচলিত বা সনাতন ধর্মের থেকে বেরিয়ে এসে, এই শ্রেণিভুক্ত মানুষই জন্ম দিল ভিন্ন একটি ধর্ম। যেখানে মানুষের চাহিদা ও মানবিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার থেকে বড় হয়ে উঠল বৃহত্তর স্বার্থের ‘আত্মগোষ্ঠী’। কিন্ত যখন দেখা যায়, এই আত্মগোষ্ঠীর বৃহত্তর স্বার্থে মানুষ নিজেকেই আরও সংকটের দিকে ঠেলে দিচ্ছে—তা কি শুধুমাত্র মানুষের নৈতিক অবক্ষয় হয়েছে বলে? তা তো নয়? তাহলে, এই যে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা চালিয়ে এক বিবর্তন হয়ে চলেছে, তা কি শুধু আমরা ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে আছি বলে? নাকি সংস্কৃতির অবক্ষয়ের বিকৃতি আমাদের বেশি প্রলোভিত করছে বলে? এই যে সংস্কৃতি-বিষয়ক একটি প্রস্তাব এল, তা কি সার্বিক? নিশ্চয় তা নয়; কেননা এর একটি প্রভাব, আমাদের ব্যক্তিগতকৃত চয়নও জড়িয়ে আছে তাতে। জড়িয়ে যায় ভাষাও। যাকে আলাদা করে ভাবা হয় না।

ধর্মের ভিত্তি যেখানে স্থূল—সেখানেই ধরা পড়ে, এই চয়নের একটা বড় বিবর্তন আর কল্যাণমূলক আধারে তখন থাকে না। যদিও সম্পর্ক-স্থাপনকে তখন ততটা আর গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয় না। কিন্ত আমরা দেখেছি, এর মধ্যেও এমন একটা আত্মীয়তা গড়ে ওঠে—যা ‘মানবিক’ মনে করা হলেও, আসলে তা ব্যবসায়িক ব্যবস্থাপনা ছাড়া আর কিছু না। কিন্তু তাই বলে কী আমাদের সমাজের কল্যাণ-রূপটি খোঁজার অবকাশ থাকবে না? মানবিক-বন্ধনের প্রয়োজনীয়তা নেই বলে মনে করতে হবে? এইরকম যে কেউ কেউ ভাববেন না—সেটাও তো মানবিক মুখেরই পরিচয়। এরপরেও অনুভব করা যায়, সংশয়, সে-ই বন্ধন কতটা নিরাপদ আশ্রয় দেয় আমাদের? সংস্কৃতি-বিষয়ক প্রস্তাবনায় প্রতিষ্ঠিত সমাজের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনা যে আছে এবং যখন তা অবন্ধ হয়—তখনই তাকে আমরা কল্যাণ-ধর্মী গোষ্ঠী বলতে পারি।

অর্থনীতি-তত্ত্বের একটি দিক নির্দেশনা করা আমাদের কাছে নতুন কিছু নয়। স্বতন্ত্র এই জনকল্যাণ বিষয়ক অর্থনীতির ফলে আমরা দেখতে পেলাম, আমাদের ‘মানবিক’ দিক যত না গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়াল তার থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠল ‘ভোগবাদ’ বিষয়ক প্রস্তাবনা। তৃপ্তি বিষয়ক জনকল্যাণ অর্থনীতি আমাদের সেই পথ দেখাতে চেষ্টা করেছে, যাতে সবসময় সম্ভাবনার বিষয়টি নিশ্চিত করা যায়। সমষ্টিগত চয়নের মাধ্যমে তৃপ্তির গুণাগুণ নির্ভরযোগ্য বিবেচনা করা। কিন্ত এখানে প্রশ্ন আসবে, তাহলে এই জনকল্যাণ বিষয়ক ধারাটি এখনও কেন অবহেলিত রয়ে গেছে? কেনই-বা একটি স্বতন্ত্র বিষয় হিসাবে আমাদের সমাজে প্রতিষ্ঠিত হতে পারেনি? যেখানে আমরা আমাদের সমাজ-গঠনের সঙ্গে সঙ্গে সমতার উল্লেখ করি। বাস্তবে এই জনকল্যাণধর্মী একটি বিষয়ে আদৌ কি নিশ্চিতরূপে কল্যাণকামী বিষয়টি সে-ই স্বতন্ত্র সম্ভাবনা নিয়ে আছে? নাকি, পরস্পরের মধ্যে যে বিরোধ—তা কল্যাণ বিষয়ক সত্যের উপর নির্ভর করছে? যে সত্যের ধারাটি বিচার করতে গিয়ে মানুষ এমন একটি ক্ষণস্থায়ী সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে—যা আসলে ব্যক্তিগতকৃত উপরকরণবাদে পরিণত হয়েছে। কারণ আমরা ততটুকুই, তুলনায় বিচার পদ্ধতিতে অর্থনীতির প্রামাণ্য আধিক্য না হলে, তা যেমন ভেঙে পড়বে, তেমন এর একটা ভিন্ন পদ্ধতিতে মানবজাতির মৌলিক অধিকারের প্রশ্নে তা অন্যদের তুলনায় নিজেকে এগিয়ে রাখবে—শুধুমাত্র তার শ্রেষ্ঠত্ব বিষয়ে সে প্রমাণ করতে পারে বলে। এইসব দৃষ্টিভঙ্গি ভর করে গড়ে ওঠায় যে আমাদের জীবন সুখের হয়ে উঠেছে, বা এই তত্ত্বের দিকগুলি আলোচনা ছাড়াই সে শ্রেষ্ঠত্বের বিভাগে জায়গা করে নিয়েছে—তা মিথ্যা যেমন নয় তেমনি তা সবই যে সত্য, তাও নয়। আমরা এই তত্ত্বের আলোচনা করে এর শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতে পারি শুধু।

সামাজিক নিরাপত্তা ও তার ইতিহাস—এই যে, একটি বিবর্তনের সমন্ধ খুব সহজেই গঠন করা সম্ভব। আমাদের অহংবোধকে যেমন সাদৃশ্য ও তুলনা দিয়ে বিচার করা সম্ভব খুব সহজেই। তেমনি এই ভাবনার শীর্ষে, যে গোষ্ঠী-কল্যাণ বিষয়ক উপদেষ্টা রয়েছে, তার চরিত্রের গুণাগুণ সম্বন্ধ প্রকাশিত হয় এরকম ভাবনায়। যেমন, ‘আমি’ নামক বৃত্তটি বৃহত্তর ‘আমি’র সঙ্গে মিলে গিয়ে ভিন্ন একটি বৃত্তের গঠন—সমাজের একটি ক্ষণস্থায়ী উত্তরণ। কিন্ত এই উত্তরণ তখনই সম্ভব যখন মিলনের পথটি হবে মৌলিক অধিকারের প্রশ্নে স্বতন্ত্র। যা কোনও ব্যক্তিগত বা গোষ্ঠী মতবাদের উপর প্রতিষ্ঠিত নয়। জনকল্যাণ বিষয়ক উপদেষ্টা সবসময় যে কল্যাণকর হবে এমনটাও নয়, তাই বিবেকবান মানুষের এরকম একটি প্রত্যয় কোনও কল্যাণধর্মী সমন্বয়ে অর্পিত হতে পারে না বলে কেউ কেউ বিশ্বাস করেন ।

আমরা যদি ধরে নিই যে, সমাজ গঠনের যে মূল নীতি তা অনুষ্ঠানে আলোচ্য বিষয়—আর এর ভিত্তিতে গড়ে উঠবে, আত্মীয়তাধর্মী সমাজ। তাহলেও, এটা যে শুধু ভুলই হবে তাই নয় এর একটা ক্ষতিগ্রস্ত দিক নির্দেশনা করবে আমাদের উৎপাদন ব্যবস্থাপনার উপর। আমাদের দেশের মানুষ মূলত বিভিন্ন বিভাগে বসবাস করেন এবং একটি ক্ষণস্থায়ী নীতির উপর ভিত্তি করে নিজের থেকে অন্যকে আলাদা করেন। এর একটা ক্ষতিকর দিক হচ্ছে মিলনের আকাঙ্ক্ষা। কিন্তু, আমরা যে বিষয়ে অর্থাৎ কল্যাণমূলক চিন্তা ও তার ফল নিয়ে আলোচনা করছি, তা বেশিদূর এগোয়নি আজও আমাদের দেশে। এর একটা প্রভাব আমাদের সমগ্র জীবনে ক্রমাগত আঘাত আনছে। কেউ কেউ এই আঘাত সহ্য করে জীবনে গতি আনতে চাইছেন আবার কেউ কেউ সমাজের অভ্যন্তরীণ জটিলতায় নিজের চিন্তা-বুদ্ধিকে সংযুক্ত করে সমাজে পরিবেশক হয়ে উঠছেন।

যদিও একটু তলিয়ে দেখলে বুঝতে পারব, যে শ্রেণির মানুষেরা এই সমাজে, প্রচলিত অর্থে জনমত গঠনের পক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত, একমাত্র তাঁরাই এই উপলব্ধিতে এসে পৌঁছান যে, গঠনমূলক কাজের প্রধান লক্ষ্যই হচ্ছে শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সমবায় পক্রিয়ার সাহায্যে মৌল ধারণাটি প্রতিষ্ঠানের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তোলা। কিন্তু এইরকম একটি অবস্থানের যোগ্যতা কি আছে ওই ধারণায়, যা একান্তভাবে সমগ্রের তুলনায় যুক্ত করা যায় সমাজকে? এভাবে কি সত্যিই সম্ভব একটি আদর্শ সংগঠন গড়ে তোলা? যদি আমরা ক্ষমতার বিন্যাসের পরিবর্তন না ঘটাতে পারি? যদি নাই-বা থাকে সংযোগ স্থাপনের সূক্ষ্ম দিকগুলো? তাহলে কি আমরা মনে করতে পারি, সাংস্কৃতিক-আন্দোলন শুরু করাটা আমাদের দেশের পক্ষে সম্ভব? মনে করতে যে কেউ পারেন, কিন্তু উন্মোচন করার প্রক্রিয়া ও প্রচেষ্টা ছাড়া আমাদের সমাজ সত্যের সম্মুখীন হতে পারবে না। সত্যের সামঞ্জস্য এমন একটি ধারণার জন্ম দেয়—যা সমগ্রের ধারণার সঙ্গে জড়িত। নৈতিক সামঞ্জস্য ছাড়া এমন একটি সমাজের কথা আমরা চিন্তাও করতে পারি না। যা আমাদের মঙ্গল চেতনার সঙ্গে যুক্ত।