গুটি-গুটি পায়ে দিন গড়িয়ে এসে স্থির হয়েছে সাঁঝের শান্তির কাছে। দ্রুতির লাবণ্য দিয়ে তার সৌষ্ঠবে ক্ষণিকের জন্য ঘনীভূত হয় অসীম দিব্যতার ধ্বনি। দ্বিধাহীন ত্রাতার মতোই সমস্ত বিপন্নতাকে ভেঙে দেবার আশায় উচ্চশির। অবিরল ছায়ার বিস্ময়ে ক্রমশ ঢেকে যাচ্ছে। অনুগত মাটি ও আকাশ। বিস্ময়! বিস্ময়! এই অপার্থিব আচ্ছন্ন আলোয় নির্জন ঘোর নিয়ে প্রাগৈতিহাসিক বিস্ময় থম মেরে আছে। যেন এখানে কোনোদিন কোনো বর্বরতা আদিম কৌলীন্য নিয়ে গুমরে ওঠেনি বা গোপন রক্তপাতের আড়ালে যে-ভীতি নিপুণ চাতুরি নিয়ে গাঢ় হয়ে জেগে থাকে অষ্টপ্রহর, সে চাপা আর্তনাদও নয় বরং প্রতিভানিপুণ রমণের পর সমস্ত আসক্তি শেষ হয়ে গেলে যে-অলসতা জড়িয়ে থাকে সে-ক্লান্তির মতো দুর্লঙ্ঘ্য, নিষ্ঠুর, মায়াময়। যাকে অস্বীকার করা যায় না তবুও তীব্রতাহীন, মায়াবী আবার নির্ভুল তেমনি সুষমায় সে নিজেকে গড়ছে চুপচাপ। গড়ে আর ভাঙে, ভাঙে আর গড়ে। নিজের সৃষ্টির কাছে তার সন্তুষ্টি কখনওই ধ্রুব নয়। ভাঙাগড়ার ভেতর শুধু স্থির হয়ে থাকে চিরদিনের মুগ্ধতা। সে-প্রজ্ঞার ইন্দ্রজালে ভিজিয়ে নেবে বলে ঘাসের চাবড়ার ভেতর থেকে উঠে আসে পিচ্ছিল দুহিপোকা, বাঁশকঞ্চির ফাটলে উঁকি দেয় নীল মোলায়েম রেশমি কীট। গোল মাজা পাথরের ভাঁজে শুয়ে থাকা শুঁয়োপোকা গভীর ঘুম থেকে জেগে ওঠে। তাদের দোদুল্যমান শরীরে রুপোলি ছায়া চমকায়। আশ্চর্য শান্তির বিস্ময়ে মনে মনে প্রতিজ্ঞা প্রখর হয়। নিঃসঙ্গ আমোদে তারা মহাজয়ের কথা ভাবে।





লেখা সৌজন্য : অচিন্ত্য মাজী, চিৎপাথরে সৌদামিনী