বিভিন্ন তথ্যসূত্র থেকে অধিকাংশ কাশ্মীরি ইতিহাসবেত্তাদের অভিমত—হাব্বা খাতুন ষোড়শ শতকের মাঝামাঝি সময়ে শ্রীনগর থেকে মাইল দশেক দূরে, ঝিলাম নদীর তীরে, চন্দাহার গ্রামে, এক সম্পন্ন কৃষক, আবদি রাথারের কন্যারূপে জন্মগ্রহণ করেন। অপরূপ রূপবতী এই মেয়েটিকে ডাকা হতো—জুন বা জুনি। ‘জুন’ শব্দটি জ্যোৎস্না শব্দের অপভ্রংশ বলে অনুমিত (সাং জ্যোৎস্না > প্রা. জোন্‌হা > জুন বা জুনি)। বালিকা-কিশোরী জুনি কাশ্মীরি ভাষার সঙ্গে সঙ্গে পারসিক ভাষাও শেখে এবং কোরানের সঙ্গে গুলিস্তাঁ ও বাস্তাঁ-ও পড়ে। ধর্মগ্রন্থ থেকে সুললিত আবৃত্তি চন্দাহার গ্রামে জুনিকে খ্যাতি দেয়। যৌবন সমাগমে আবদি রাথার তাঁর বিবাহ দেন আজিজ নামে এক যুবকের সঙ্গে, বিত্তশালী কৃষকের ঘরে। অনুপম দেহ-সৌন্দর্য ও অমেয় সুধাকণ্ঠী হওয়া সত্ত্বেও শ্বশুরবাড়িতে তাঁকে ক্রীতদাসীর মতো পরিশ্রম করতে হতো। ঝরনা থেকে জল, পাহাড়ের জঙ্গল থেকে জ্বালানি এবং বুনো গাছ-গাছড়া, ফলমূল আনা, চরখায় সুতো কাটা—অ-সন্ধ্যা সকাল সহস্র কাজের চাকায় তিনি ছিলেন আবদ্ধ। সবার উপরে ছিদ্র-সন্ধানী ছিলেন তার শাশুড়ি, একটু ভুল হলে আর রক্ষা নেই। হয়তো রাতে চরখায় সুতো কাটতে কাটতে তরুণী বধূটির চোখ ঘুমে জড়িয়ে আসছে, আর তখনই পেছন থেকে শাশুড়ি এসে তাঁর চুলে হেঁচকা টান মারতেন; যদি জল আনতে গিয়ে মাটির ঘড়া যেত ভেঙে, জুনিকে বলা হতো নতুন ঘড়া নিয়ে আসতে, অথবা পিতৃগৃহ থেকে ঘড়ার জন্যে অর্থমুদ্রা। তাঁর স্বামীও নববধূর প্রতি কোনও মায়া-মমতা দেখায়নি, বরং মায়ের প্ররোচনায় সব সময়ে স্ত্রীর ভুল ধরার জন্যে ওঁত পেতে থাকত। তাঁর নিষ্পাপ সরল জীবন ছিল দুঃখদুর্দশা-লাঞ্ছনা-যন্ত্রণার তমসায় আচ্ছন্ন। এ সবই তিনি লিখেছেন তাঁর রচনায়।

স্বামীর ভালোবাসা এবং মধুর ব্যবহার হাব্বা খাতুনের কষ্ট খানিকটা লাঘব করতে হয়তো পারতো, কিন্তু আজিজ উলটে মায়ের উসকানিতে স্ত্রীর উপরে কড়া দৃষ্টি রাখত তাঁর চরিত্রে খুঁত ধরার জন্যে। পত্নীর সৌন্দর্যশ্রী, কাব্যপ্রতিভা, সুমধুর কণ্ঠস্বর—কিছুই আজিজকে আকৃষ্ট করতে পারেনি। হয়তো এটি ছিল বিধি-নির্দিষ্ট, স্বামী প্রেমে নিমজ্জিতা বধূর কাছ থেকে বোধহয় আমরা বেদনা-জর্জরিত এমন হৃদয়গ্রাহী কাব্য-কুসুম পেতাম না।

হাব্বা খাতুন প্রধানত ছিলেন ‘লোল’ কবিতার—প্রেম-গীতিকবিতার কবি। ‘লোল’ হলো ছয় থেকে দশ লাইনের কাশ্মীরি প্রেম-কবিতা, যার মধ্যে একমুখী সংহত আবেগ—যে-আবেগে তীব্র প্রেম-কামনা, যা প্রায়শ ব্যর্থতায় যন্ত্রণা-জর্জর, কদাচিৎ মিলনের আনন্দে মুখর। ভালোবাসার নানা আবেগ বিচিত্ররূপে তাঁর কবিতায় স্পন্দিত—মিলনাকাঙ্ক্ষার নন্দিত প্রকাশ ছাড়াও সে-ভালোবাসা কখনও প্রতীক্ষায় প্রতপ্ত, ব্যর্থতায় বিষণ্ণ, বিনিময়ে ব্যাকুল, সংশয়ে দ্বিধাগ্রস্ত, অপ্রাপ্তির বেদনায় বেপথু। ‘লোল-কবিতা’ হাব্বা খাতুনের সৃজনশীলতায় নতুন আস্পন্দন ও আবেগ লাভ করেছিল, পাঠক হিসাবে আমরা অনুভব ও প্রত্যক্ষ করি ‘লোল-কবিতা’য় হাব্বা খাতুনের প্রতিভার সমধিক বিকাশ।

আজিজ যেমন বিদ্যাভ্যাস করেনি তেমনি তার ব্যক্তিত্বেও ছিল না শিক্ষা-সংস্কৃতির স্পর্শ। সম্ভবত গ্রামের অন্য তরুণ যুবকেরা হাব্বা খাতুনের একটু হাসি বা সুস্মিত ব্যবহারের জন্যে যে-কোনো মূল্য দিতে প্রস্তুত ছিল। সে-ই সুদূর ষোড়শ শতাব্দীতেও এই কাশ্মীরি গ্রামিকা এ সত্য সম্বন্ধে অসচেতন ছিলেন না। যদিও তিনি আজিজের রুচি-ব্যবহারকে উন্নত করে সহনযোগ্য মানুষ বা জীবনসঙ্গী করবার চেষ্টা করেছিলেন যথাসাধ্য, কিন্তু কোনও কিছুই তাঁর স্বামীকে বদলাতে পারেনি। হাব্বা খাতুনের ‘ছাও’ (উপভোগ করো) কবিতায় তাঁর এই মনোকামনা অভিব্যক্ত—

তোমার জন্যে তৈরি করেছি পুষ্প-বলয়, প্রিয়তম!
এসো, উপভোগ করো কুসুম-মুকুলিত!

আমার কাছে, পৃথিবী, তুমি নীল আকাশ,
সৃষ্টিকর্তা যিনি দিয়েছেন মর্যাদা এবং সম্মান,
আমি প্রতিমূর্তি কোমলতার, তুমি প্রিয় অতিথি,
এসো, উপভোগ করো কুসুম-মুকুলিত!

লায়লা জ্বালিয়েছিল আঁধার রাতে একটি প্রদীপ,
আহারে, বেচারা হলো অচেতন-অনুভূতিহীন,
তুমি প্রদীপ যার কাছে আমি পতঙ্গ,
এসো, উপভোগ করো কুসুম-মুকুলিত!

আমার জীবন-নিদাঘ অবসান হতে যায়,
যাচ্ছে শুকিয়ে, গোলাপ-নিচয়;
ও বুলবুল, যদি থাকতে আরও কিছুক্ষণ!
এসো, উপভোগ…

বেদনা বয়ে যায় আমার দিবস-রজনী,
কিন্তু তুমি কখনও দাওনি কান আমার কথায়;
তুমি খুঁত পাও কি কোনও আমার কাজে?
এসো,…

কুমোর বানায় মাটির বাসন নানা আকারে
সাজায় তাদের বিচিত্র রঙে
কিছু বনে যায় বেডৌল, অন্যগুলি সুষম
এসো,…

তোমার জন্যে রেখেছি পোশাক মনোরম পশমিনায়,
প্রিয় আজিজ, রাগ করো না জুনির উপরে
হাব্বা খাতুনের সব খোয়াব রইল অপূর্ণ
এসো,…

কিন্তু শত আবেগ প্রকাশেও জুনির দুঃখ কমলো না এতটুকুও, আজিজ হাব্বার প্রতি রইল উদাসীন। এই রকম পরিস্থিতিতে মেয়েরা সাহায্যের জন্য যায় অলৌকিক শক্তিসম্পন্ন ফকির-সন্তদের কাছে। জুনিও তাই করেছিল, গিয়েছিল খাজা মাসুদ-এর কাছে। তিনি সান্ত্বনা দিয়ে সুখ-সৌভাগ্যময় জীবনের ভবিষ্যবাণী করেছিলেন। কথিত আছে, তিনিই নাকি জুনির নাম দিয়েছিলেন—হাব্বা খাতুন।

এদিকে কোনওকিছুই জুনির জীবনে আনন্দের সঞ্চার করতে না পারলেও সে তার দুঃখের কথা শব্দে-সুরে নিবেদন করতে থাকে স্বামীকে। এমনই একটি বেদনা-গাথা—’লাদিয়ো দয়ন পশ তো হে’ (আমি কি পাঠাতে পারি তোমাকে ডালিম-কলি এবং তুলসী?)—

‘কী করে কাটাই দিন আমার, প্রিয়তম, তোমাকে বিনা?
তোমার জন্যে বানাবো কি আমি ডালিম আর সুগন্ধি ফুলের গুচ্ছ?’

ঘুরেছি আমি পর্বত অরণ্যে তার জন্যে,
অনুনয় করি বলো অন্য কোন্ সে-নারী করেছে তোমাকে আকর্ষণ?
এসো, আমি অসহায়, প্রণয়-পীড়িত
বানাবো তোমার জন্যে আমি কুসুম-গুচ্ছ।

কোন্ ছুতোয় করেছে খণ্ড খণ্ড হৃদয় আমার সে কাস্তে দিয়ে?
বোলো তাকে আমার মরার পরে
হারাবে, সে তার জীবনের নোঙর,
বানাবো তোমার জন্যে আমি কুসুম-গুচ্ছ।

আত্মরতি সুখে মগ্ন সে গেছে ভুলে আমায়;
অনুনয় করি বোলো তাকে সে নিজের সত্যের কাছে হলো প্রমাণিত ভুয়ো,
ঝরে হাব্বা খাতুনের অশ্রু অবিরল
বানাবো তোমার জন্যে আমি কুসুম-গুচ্ছ।

তাঁর জীবন যখন খুবই দুঃখ-বেদনা-যন্ত্রণার মধ্যে কাটছিল, সে-ই পরিস্থিতি ছিল মর্মন্তুদ, মৃত্যু-যন্ত্রণাধিক। তিনি বুঝতে পারছিলেন না—মৃত্যু কীভাবে এই অবস্থা থেকে অব্যাহতি দিতে পারে! এই সময়ে তিনি ‘ক্যায়া কেহো বাতী মেয়্যানি মরনায়?’ (আমার মৃত্যুতে আমি কী লাভ করব?)—গানটি রচনা করেন, যার মধ্যে মৃত্যু-ভাবনার শেষে আত্ম-সমীক্ষার পরিচয় পাওয়া যায়—

ক্ষমা কোরো আমার সকল ত্রুটি, দুনিয়ার হে রক্ষাকর্তা!
কী লাভ হবে তোমার, প্রিয়তম, যদি আমি মরি?

খারাপভাবে জড়িয়ে পড়ে দিন কাটানো দুঃসহ আমার,
সুকোমল সুগন্ধি তুলসী আমি হয়েছি এখন কর্পূর গন্ধা,
যেহেতু বহন করছি হৃদয়ে আমার জ্বলন্ত আগুন
কী লাভ হবে তোমার, প্রিয়তম, যদি আমি মরি?
জড়িয়ে নিয়েছ নিজেকে তুমি সব কাঙ্ক্ষিত সম্পদে,
রিক্ত হাতে তোমার শরীর কি শান্তি পাবে কবরে!
উচ্চাভিলাষী যৌবন আমার, শান্ত হও না কেন বাস্তবতায়?
কী লাভ হবে তোমার, প্রিয়তম, যদি আমি মরি?

পড়ে নিলাম ত্রিশটি অধ্যায় নিরবচ্ছিন্ন
আসেনি একটুও বৈচিত্র্য,
মাত্র একবার পাঠেই কেউ কি করে আয়ত্ত প্রেম-পত্র?
কী লাভ হবে তোমার, প্রিয়তম, যদি আমি মরি?

হাব্বা কি ভেবেছিলেন ‘দ্বিতীয়বার পড়বার’ ‘ভালোবাসার পত্র’? ভাবলেও তাঁকে দোষ দেওয়া যায় না। মনে হয় তিনি পুরোপুরি ভাবে আশা হারাননি। যদিও তাঁর জীবনে ছিল বিষাদময় গাঢ় তিমির পুঞ্জ, তবুও তিনি এমন এক বিবাহিত জীবনের স্বপ্ন দেখতেন—যেখানে রয়েছে আনন্দ, উষ্ণতা, নিবিড় ভালোবাসা। তাঁর মতো সংবেদনশীল, সুকুমার হৃদয়, সূক্ষ্ম অনুভূতিময় নারী-ব্যক্তিত্ব গীতিকাব্যময়তার মধ্যে ঢেলে দিচ্ছেন আপন বিষাদ ও ব্যর্থতা, কিন্তু তবু তাঁর মধ্যে কম্প্রমান আশার ক্ষীণ আলোক-রেখা। এই অনুভূতির অভিব্যক্তি তাঁর ‘য়োলো মিয়ানি পোষে মদানো’ (এসো আমার ভালোবাসা, আমার পুষ্পিত মধুদীপ) সংগীত। এর মধ্যে প্রকাশ পেয়েছে তাঁর মনের অবস্থা—বিষণ্ণতা, তিক্ততা, চারপাশের লোকজনের কদর্য কথাবার্তা, তাঁর স্বামীর ঔদাসীন্য-মিশ্রিত বিরক্তি। গানটির মধ্য রয়েছে অভিযোগের সুরও—

‘ছিনিয়ে নিয়ে হৃদয় আমার তুমি গেছ চলে অনেক দূরে,
এসো, এসো, আমার ভালোবাসা, আমার পুষ্পিত মধুদীপ!’

চলো, যাই আমরা, সখা, তুলতে যূথী,
মরণের পরে পারে না কেউ করতে জীবন উপভোগ;

প্রিয়, আমার কামনা তোমার সমৃদ্ধি,
এসো, এসো, আমার ভালোবাসা, আমার পুষ্পিত মধুদীপ!

চলো, সখা, তুলে আনি ওই হলুদ সুপ্রভ ফুল,
যাবে না খোলা ভাগ্যের জট পাকানো সুতো,
হাসছে দেখো লোকেরা আমার অবমাননায়,
এসো, এসো, আমার ভালোবাসা, আমার পুষ্পিত মধুদীপ!

চলো, সখা, তুলে আনি ঝকঝকে হলুদ-লাল ফুল;
কুঠারাঘাতে হয় আমার হৃদয় শতধা,
এত ঘৃণা-অবজ্ঞা, কেউ কি নিয়েছে খোঁজ আমার,
এসো, এসো, আমার ভালোবাসা, আমার পুষ্পিত মধুদীপ!

চলো, সখা, তুলে আনি বনজ ফল-মূল,
হৃদয়হীন লোকেরা করে আমাকে উপহাস,
যদি হয় কোনওদিন তাদেরও আমার দশা!
এসো, এসো, আমার ভালোবাসা, আমার পুষ্পিত, মধুদীপ!

চলো, সখা, যাই আমরা বনের গভীরে,
লোকেরা ভরেছে বিষে কান তার আমার প্রতিকূল,
অজ্ঞতায় না-বুঝে করেছে সে বিশ্বাস সে সব!
এসো, এসো, আমার ভালোবাসা, আমার পুষ্পিত মধুদীপ!

চলো, সখা, নিয়ে আসি জল ঘড়া ভরে
সমস্ত দুনিয়া রয়েছে গভীর ঘুমে, হে প্রিয়,
উন্মুখ আমি তোমার সাড়া পেতে
এসো, এসো, আমার ভালোবাসা, আমার পুষ্পিত মধুদীপ!

উপরের রচনাটি অনেক কাশ্মীরি সাহিত্য-সমালোচকদের মতে একটি শ্রেষ্ঠ কাশ্মীরি গীতিকবিতা। কারণ এর মধ্যে রয়েছে—মানবিক আবেগ, আন্তরিকতা, গভীর অনুভূতি, বিষণ্ণতা, চিন্তার নবীনত্ব, সার্বিক আবেদনময়তা, বাক্‌ভঙ্গির সারল্য এবং রচনাশৈলীর মাধুর্য। প্রকৃতি জগতের বুনো গাছপালার সঙ্গে মানুষের আবেগময় সাযুজ্য এক বিশাল চালচিত্রকে একীকরণ করেছে।

নিজের অপরিসীম দুঃখ-বেদনা সত্ত্বেও জুনি স্বামী আজিজের জন্যে ছিলেন যে-কোনো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত। বারংবার চেষ্টা করেছেন তিনি স্বামী-শাশুড়ির মন পাবার এবং ফলস্বরূপ আরও বেশি অত্যাচারিতা হয়েছেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে, শাশুড়ির হৃদয়ে যেমন তিনি সহানুভূতি সঞ্চার করতে পারবেন না, তেমনি স্বামীর মনেও তাঁর প্রতি প্রেম। শাশুড়ির অত্যাচারের কথা ইতোমধ্যে উল্লেখিত। সে-ই ঘটনার প্রেক্ষিতে হাব্বা নিরুপায় হয়ে নিজের মা-বাবার কাছে আবেদন জানিয়েছেন—’চারা, কর, মিয়ান মালিনিয়ো’য় (আমার জন্যে কিছু করো আমার পিতা, আমার স্বজন)—

সব কিছু ঠিকঠাক নয় আমার স্বামীর ঘরে,
করো আমাকে উদ্ধার যন্ত্রণা থেকে, আমার পিতা, স্বজাতি-স্বজন!
ঝরনা-ধারায় গিয়েছিলাম জল আনতে
হে আমার পিতা, স্বজাতি-স্বজন, ভেঙে গেল জলের ঘড়া,
হয় এনে দাও একটা নতুন ঘড়া,
নয়তো দিয়ে দাও দাম, করি অনুনয় আমি তোমাদের।
সব কিছু ঠিকঠাক নয় আমার স্বামীর ঘরে।

ক্ষয়ে যাচ্ছে আমার কোমল তরুণী শরীর,
ভেঙে যাচ্ছে আমার পিঠ চড়তে চড়তে পাহাড়,
আনতে আনতে ফল-মূল বনে-জঙ্গলে পায়ে পড়েছে ফোসকা,
কাটা জায়গায় পড়ছে নুনের ছিটা,
সব কিছু ঠিকঠাক নয় আমার স্বামীর ঘরে

কোথাও কোনও সান্ত্বনা না পেয়ে হাব্বা তাঁর সব হৃদয়-বেদনা ঢেলে দিয়েছেন গানের মধ্যে। কথিত আছে—উপরের মর্মস্পর্শী গানটি যখন তিনি গৃহপালিত পশু চড়াতে এসে, জাফরান খেতে দাঁড়িয়ে গাইছিলেন, সে-ই সময় খেতের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, কাশ্মীরের রাজকুমার য়ুসুফ শাহ্ চক। সংগীতের কাব্য-সৌন্দর্য ও সুর-মাধুর্যে আকৃষ্ট হয়ে তিনি গায়িকার দিকে তাকালেন—প্রথম দর্শনেই প্রেম। সে-ই মুহূর্ত থেকে নতুন ইতিহাস জন্ম নিল, বদলে গেল হাব্বা খাতুনের জীবন-ধারা। প্রেম-মুগ্ধ রাজকুমার সৌন্দর্যবতী গায়িকাকে তাঁর পরিচয় জিজ্ঞেস করলেন, তৎক্ষণাৎ রচিত এক চতুষ্পদী কবিতায় হাব্বা খাতুন নিজের পরিচয় দিলেন। য়ুসুফ শাহ্ দেখলেন—এ নামটি তো তাঁর অতি পরিচিত। পূর্বেই পাম্‌পারের ধর্মগুরু খাজা মাসুদের মুখে এ-নামের পরিচয় তিনি পেয়েছেন। এরপর যা হওয়ার ছিল তাই হলো। রাজকুমার হাব্বা খাতুনের বিবাহবিচ্ছেদ ঘটিয়ে নিজ জীবন-সঙ্গিনী হিসেবে গ্রহণ করলেন তাঁকে।

কোনও কোনও ঐতিহাসিক অবশ্য বলেন—হাব্বা খাতুনকে বেগমের মর্যাদা না-দিয়ে তাঁকে শুধু হারেমবাসিনী করা হয়েছিল। কিন্তু এই মতবিরোধে তাঁর কবি-খ্যাতির বা কাব্য-মাধুর্যের কোনও হানি ঘটে না। হাব্বা খাতুন কাশ্মীরি প্রেম-কবিতায় চিরদিন অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। ১৫৭৯ খ্রিস্টাব্দে পিতার মৃত্যুর পরে কাশ্মীরের রাজসিংহাসনে বসলেন য়ুসুফ শাহ্ চক। রাজা য়ুসুফ শাহ্ চক-এর সঙ্গে চোদ্দ বছরের বিবাহিত জীবনে হাব্বা খাতুন রচনা করেন তাঁর প্রগাঢ়, প্রতপ্ত, প্রেম-সঞ্জাত গীতিকবিতাগুলি। এখানে যদিও আমরা তাঁর সে রচনাগুলি নিয়ে কোনও কথা বলছি না।

ইতোমধ্যে শ্ৰীনগরে শিয়া ও সুন্নি সম্প্রদায়ের ভেতর দাঙ্গা শুরু হয়ে গেলে, দিল্লির আকবর বাদশাহ সে-ই সুযোগে সশস্ত্র সৈন্যবাহিনী প্রেরণ করেন কাশ্মীরে। প্রাথমিক বিফলতার পরে আকবরের সৈন্যরা য়ুসুফ শাহ্-কে বন্দি করে নিয়ে যায়। পরবর্তীকালে য়ুসুফ শাহের সঙ্গে সম্রাট আকবরের খানিকটা সমঝোতা হওয়ায় মোগল বাদশাহের সাহায্যে কাশ্মীর-রাজ আবার আপনরাজ্য ফিরে পাবার আশা পোষণ করেছিলেন, কিন্তু তা বাস্তবে রূপায়িত হয়নি। কাশ্মীর-ইতিহাসের সে-ই অধ্যায় আমাদের আলোচ্য নয়। কিন্তু যে তথ্যটি হাব্বা খাতুনের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ তার উল্লেখ অনিবার্য। স্বামী য়ুসুফের প্রস্থানের পরে আবার পূর্বের ন্যায় কণ্টকময় হয়ে উঠল হাব্বা খাতুনের জীবন। রাজমহিষীর মর্যাদা হারিয়ে রাজপ্রাসাদ থেকে বহির্গত হয়ে হাব্বা খাতুন সাধারণ মানুষের মধ্যে ঘুরতে থাকেন—এক ভূখণ্ড থেকে অন্য জনপদে।

হাব্বা জানতেন তাঁকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে, তাঁর প্রিয়তমের কাছ থেকে, সে-ই বিচ্ছেদ-বেদনায় তিনি ছিলেন সতত অস্থির। রাজনীতির জটিল আবর্তের তিনি সন্ধান রাখতেন না, তাঁর মনে হয়েছিল—হয়তো দীর্ঘ অদর্শন ও অন্তহীন বিচ্ছিন্নতায় য়ুসুফ অন্য নারীর প্রতি আকর্ষিত। হাব্বা কি এ কথা জানতেন যে, আকবর বাদশাহ কাশ্মীরাধিপতিকে প্রদান করেছিলেন দুটি ক্রীতদাস-রমণী তাঁর নির্বাসন-কালে আনন্দ-বিধানের জন্যে? কেউ বলতে পারেন না। হাব্বা স্বামী য়ুসুফের নির্বাসনকালে গেয়েছেন “কা কামিয়ু স্বা’নি মিয়ানি” (আমার প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে সে কে)—

সে কে আমার প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে, ভালোবাসা, করেছে তোমাকে প্রতারণা?
কেন তুমি শুরু করেছ বিতৃষ্ণ হতে আমার প্রতি?
আমার হৃদয়ে তো শুধু তোমারই প্রতিচ্ছবি;
দূরে সরিয়ে দাও এই বিরাগ ও অসন্তোষ,
কেন তুমি শুরু করেছ বিতৃষ্ণ হতে আমার প্রতি?

অঝোর ধারায় ঝরেছে অশ্রু আমার গাল বেয়ে
হরিণী নয়ন আমার বেদনায় রক্তিম;
প্রেম-জর্জরিত হৃদয়ে আকুল তোমার জন্যে
কেন তুমি শুরু করেছ বিতৃষ্ণ হতে আমার প্রতি?

তোমাকে দিত আনন্দ আমার এই দুটি চোখ
মসৃণ করেছি ত্বক আমার, প্রসাধন অপরূপ
বধূর পোশাকে উজ্জ্বল অলংকার
যৌবনবতী দেহ উচ্ছ্বসিত তোমার জন্যে
কেন তুমি শুরু করেছ বিতৃষ্ণ হতে আমার প্রতি?

অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে আমি শুধু তোমারই
এই বহমান জলধারা, করি শপথ তোমার নামে, প্রিয়তম,
নদীর জলে দেখতে পাই না আমার মুখের ছায়া,
কীসের জন্যে করেছ আমাকে দোষী, কী পাওনি চেয়ে আমার কাছে?
কেন তুমি শুরু করেছ বিতৃষ্ণ হতে আমার প্রতি?

আমার গোপন কথাটি বলিনি আমি, এমনকি বসন্ত সমীরণকে,
জ্বালাচ্ছে তা আমাকে আমার অন্তরে অন্তরে,
কার হাতে তুমি সঁপেছ বিশ্বাসে আমাকে ছেড়ে এই ভাবে,
কেন তুমি শুরু করেছ বিতৃষ্ণ হতে আমার প্রতি?

ভালোবাসার জ্বলন্ত আগুন জ্বালাচ্ছে আমার অস্থিমজ্জা,
হাসিমুখে তাও সহ্য করেছি আমি,
তোমার খুশির জন্যে নিজেকে করেছি নিঃশেষ
দিয়েছি সমাধি অনেক স্বপ্ন আমার
কেন তুমি শুরু করেছ বিতৃষ্ণ হতে আমার প্রতি?

কলঙ্কিত চাঁদের মুখ জানায় তার দুঃখ;
জুনের হৃদয়ে তিমির পুঞ্জ, যখন তুমি নিয়েছ বিদায়,
তারই ভারে আনত আমার মাথা পাপে;
ভালোবাসা, আমি লালন করছি এই বেদনাই
কেন তুমি শুরু করেছ বিতৃষ্ণ হতে আমার প্রতি?

হাব্বা খাতুনের গীতিকবিতাগুলির রচনাকাল সঠিকভাবে নির্ণয় করা সম্ভব না-হলেও গানটিতে তাঁর প্রিয়তমের যে-বিদায়ের কথা বলা হয়েছে—তার মধ্যে কাশ্মীর থেকে য়ুসুফ খানের চিরবিদায়কে সূচিত করে। অন্তিম বিচ্ছেদের বেদনা এই গীতি কবিতায়, মর্মান্তিকভাবে মর্মরিত। সপত্নী-পুত্র ইয়াকুবের কাছে, যিনি য়ুসুফের পরে সিংহাসনে বসেছিলেন, হাব্বা কোনও সহৃদয় আতিথেয়তা আশা করেননি। তিনি প্রাসাদ এবং রাজকীয় বৈভব ত্যাগ করে সাধারণ মানুষের অপরিচয়ের ভিড়ে মিশে যাওয়ার পর তাঁর জীবনের শেষ দিনগুলির কোনও বিশ্বাসযোগ্য তথ্য পাওয়া যায় না। তিনি অবশ্য তাঁর অচরিতার্থ ভালোবাসার সংগীত গেয়ে চলেছেন, বিচ্ছেদ-বেদনার আর্তি তাঁর গীতিকবিতাকে করে তুলেছে আরও অনেকবেশি আবেদনময়। এই গীতিকবিতাগুলিতে রয়েছে ব্যর্থ ভালোবাসাকে মেনে নেবার সুর, এবং পশ্চিম-দিগন্তে তাঁর জীবনাবসানের ইশারা। তাঁর গীতিকবিতা—’লালো কালো আলওয়াই’ (ভালোবাসা, আমি কি তোমায় উৎসর্গ)—

একবার শুধু ডাকো আমাকে দূর হবে সব বেদনা আমার,
আমার সব করব তোমাকে উৎসর্গ, ভালোবাসা।

সুস্বাদু আহার করেছি তৈয়ার তোমার জন্যে,
সুরসাল পানীয় করে তোমাকে আহ্বান,
বানাবো তোমার জন্যে অনুপম ফুলমালা,
প্রিয়তম, তোমাকে সমর্পণ সব কিছু!

সুরভিত করব রজত দেহ আমার মার্জনায়
তোমার জন্যে অস্থির আমি,
শরীরে ঢালবো চন্দন-সুবাসিত বারিধারা,
এসো তুমি, আমি নিজেকে করব উৎসর্গ!

পাহাড়ের পেছনে যেমন চাঁদ
টলমল করে দাঁড়াব আমি ডুবে যাবার আগে,
গভীর ঘুমে রয়েছ কোথায় তুমি?
তোমার জন্যে উৎসর্গ সবকিছু, আমার ভালোবাসা!

পাখি ধরতে বেড়াল যেমন থাকে অপেক্ষায়,
কে পারে এড়াতে মরণের থাবা?
নিজেকে সঁপেছি আমি তার কাছে,

এসো, আমার ভালোবাসা, নিজেকে করব উৎসর্গ!
কোন্ হেয় ভয়াবহ তাড়ালো তোমাকে ঘর থেকে?
কেন তুমি রইলে না রাতের তমসায়?
হাব্বা খাতুন বলে দেয় তার বলার কথা,
এসো তুমি, ক্ষণিকের জন্যে, নিজেকে করব উৎসর্গ।

১৫৮৬ সালে মোগলরা কাশ্মীরকে সাম্রাজ্যযুক্ত করার পরেও হাব্বা খাতুনের মনের মধ্যে আশার কিরণ-রেখা জেগে ছিল, যে, হয়তো আবার তিনি য়ুসুফ শাহের সঙ্গে মিলিত হবেন—তা তিনি প্রজাপালক বা সাধারণ প্রজা যাই হন-না কেন। কিন্তু তাঁর সে স্বপ্ন ছিল ক্ষণস্থায়ী, কিছুদিনের মধ্যেই য়ুসুফ শাহের মৃত্যু হয়। যতদূর জানা যায়, কাশ্মীর থেকে য়ুসুফ শাহের অপসারণের পরে, প্রায় দু-দশক বেঁচে ছিলেন হাব্বা খাতুন। তাঁর সে-ই যাযাবর-জীবনে না-ছিল কোনও পার্থিব ধনসম্পদ, না জীবনের প্রতি আকর্ষণ। এর পরেও তিনি কিছু গীত হয়তো রচনা করেছিলেন, কিন্তু তাঁর হৃদয় হয়ে গিয়েছিল সমাহিত-নিস্তব্ধ। তাঁর বিলাপের মধ্যে ছিল একরাশ বেদনা, দুঃখ এবং তিক্ততা; এবং সে-ই সঙ্গে পরাভবের মনোভাব। এই সময়ের একটি অনুগতি মানসিকতার কবিতা ‘কমইমসা রয়বিন শুরবে পান’ (কেউ যেন না-হারায় তার জীবনের যৌবনবতী বছরগুলি)-এ তিনি যেন জীবনের মধুর ও তিক্ত অভিজ্ঞতার সার-সংক্ষেপ করেছেন—

আমার হৃদয়ের আগুনকে করতে হবে লালন আমাকে,
না-হারায় কেউ যেন যৌবনের সুযোগগুলি।

আদরে করেছে বড় মা-বাবা আমায় মিছরি দানা আর কস্তুরী-গন্ধে
দুধের ধারায় ধুইয়েছেন তাঁরা আমাকে—
সেই আমিই আজ অসহায় ঘুরে বেড়াই দিশেহারা
কেউ যেন না-হারায় যৌবনের সুযোগগুলি।

মা-বাবা দিয়েছেন তাঁদের অশেষ ভালোবাসা
দাঁড়িয়ে থাকত দাসীরা আদেশ-অপেক্ষায়
কখনও ভাবিনি ভেঙে পড়বে ধুলোয় সুখের প্রাসাদ
কেউ যেন না-হারায় যৌবনের সুযোগগুলি।

যখন মা-বাবা দিলেন আমার শাদি
গান গেয়েছিল সহেলীর হাসি-খুশিতে,
যে-ভালোবাসার গানগুলি তাঁরা গেয়েছে কখনও হয়নি সত্যি
কেউ যেন না-হারায় যৌবনের সুযোগগুলি।

‘সৌভাগ্যবতী মেয়ে’ বলেছে তাঁরা আমাকে
‘শ্বশুরবাড়ির সবাই করছে তোমার অপেক্ষা’,
ঝকঝকে পালকি ছিল রুপোয় মোড়া
কেউ যেন না-হারায় যৌবনের সুযোগগুলি।

যখন এখানে আমি কোথায় তুমি কত দূরে
পরস্পরের ছিলাম আমরা এত প্রিয়
কে ভেবেছিল সেদিন তামাম দুনিয়া লুটোবে ধুলোয়
কেউ যেন না-হারায় যৌবনের সুযোগগুলি।

যদি না থাকে বিধাতার আশীর্বাদ বা ভাগ্যের
এক দানা খাবারও কি পায় কেউ?
হাব্বা খাতুন পান করেছিল গভীর ভালোবাসা,
কেউ যেন না-হারায় যৌবনের সুযোগগুলি।

১৫৯২ সালে য়ুসুফ শাহ্ মারা যাবার আগে, যতদূর-সম্ভব এটিই ছিল হাব্বা খাতুনের অন্তিম গীতি। ঝিলাম নদীর ধারে, শ্রীনগরের ক্যান্টনমেন্টের কাছে, ৫৬ বছর বয়সে, মৃত্যুর পরে, হাব্বা খাতুনকে সমাধিস্থ করা হয় (১১ এপ্রিল ১৬০৭)। পরবর্তীকালে, অন্য একটি তথ্যানুযায়ী, যার সত্যতা সম্বন্ধে অনেকেই সন্দেহ পোষণ করেন। বলা হয়—য়ুসুফ শাহের বিচ্ছেদ-বেদনা সহ্য করতে না পেরে, তাঁকে খুঁজতে খুঁজতে তিনি পাটনার ৭৫ কি.মি. দক্ষিণে বাসোক নামক জায়গায় পৌঁছান, যেখানে কাশ্মীর থেকে নির্বাসনের পরে, অবশেষে য়ুসুফ শাহ্ একটি ভূসম্পত্তির অধিকারী হয়ে অবস্থান করছিলেন। এটা অবশ্য জানা যায় না যে, যখন হাব্বা খাতুন বাসোক পৌঁছান তখন য়ুসুফ শাহ্ জীবিত ছিলেন কিনা।

য়ুসুফ শাহ যেখানে সমাধিস্থ হয়েছিলেন বলে বলা হয়, তার পাশে দ্বিতীয় একটি সমাধি রয়েছে। অনুমিত—এই সমাধিটি হাব্বা খাতুনের। এই অনুমানের সমর্থনে বলা হয় যে, য়ুসুফের সঙ্গে অনেক কাশ্মীরিও বাসোকে বসবাস করতেন, তার মধ্যে ছিলেন য়ুসুফের পুত্র ইয়াকুবও। কাশ্মীরে মোগলদের বিরুদ্ধে প্রবলভাবে লড়াই করেছিলেন ইয়াকুব, কিন্তু পরাজিত হন। পাটনার কাছে বাসোকে য়ুসুফ শাহ্ সহ অন্যান্য কাশ্মীরিদের যেসব সমাধি রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়—তার একটি কারণ, এই সমাধির সঙ্গে কাশ্মীরের সমাধির খুব মিল।

ইতিহাসের এইসব বিভিন্ন মত ও ধারণা থেকে দূরে সরে গিয়ে, আমরা যদি বর্তমানের বাস্তবতার দিকে দৃষ্টিপাত করি, তা হলে দেখতে পাই—শ্রীনগর থেকে তিন মাইল দূরে পাণ্ডাছোক গ্রামে যে মসজিদে হাব্বা খাতুন তাঁর শেষ জীবন কাটিয়েছেন—সেখানকার সমাধিস্থলে হাব্বা খাতুনের মৃত্যু দিন, অর্থাৎ ১১ এপ্রিল, তাঁকে স্মরণ করে অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়। শ্রীনগর বেতারকেন্দ্র থেকে বা দূরদর্শন থেকেও হাব্বা খাতুনের জীবনালেখ্যধর্মী বহু বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচারিত হয়েছে।



কাশ্মীরি লোকসংস্কৃতিতে হাব্বা খাতুন একটি বিশিষ্ট নাম। সামান্য আগ্রহী হয়ে গুগলে সার্চ করলে, ইংরাজি ভাষান্তরে তাঁর গীতিকবিতার বই সহ তাঁর সম্পর্কে ছোট বড় নানা আলোচনা মায় একসার ইউটিউব ভিডিওর সন্ধান মেলে। পাশাপাশি এক-আধটি বাংলা অনলাইন পত্রিকায় হাব্বা খাতুনের নামোল্লেখ বা তাঁর গীতিকবিতার ভাষান্তর-প্রয়াসও নজরে পড়ে।

ভারতীয় তথ্য সম্প্রচার মন্ত্রকের কর্মী হওয়ার সুবাদে শ্রী মৈত্রকে জম্মু-কাশ্মীর সহ দেশের বহু স্থানে বসবাস করতে হয়েছে। সাতের দশকে রেডিও জম্মু-কাশ্মীর (ঘোষণায় অল ইন্ডিয়া রেডিও জম্মু বা কাশ্মীর-এর বদলে ‘রেডিও জম্মু-কাশ্মীর’ বলার রেওয়াজ ছিল) বিভাগে কাজের সূত্রে স্থানীয় জনজীবনকে অনেক কাছ থেকে তিনি দেখার সুযোগ পান। হাব্বা খাতুনের গীতিকবিতার শব্দ-অনুভবকে ‘বঙ্গীয়করণ’ করার আগ্রহ/প্রয়াস তাঁর সে-ই সময়কার।



প্রচ্ছদচিত্র সৌজন্য: www.dawn.com