ঐশ্বরিক

অনন্ত ঈশ্বর মেলে দিল ডানা আকাশে-আকাশে, মেঘে-মেঘে
অনতিক্রম্য দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময় নিয়ে লিখিত ইতিহাস
দুপুরের ফেরিঘাটে অলস মাঝির ঘুমে জেগে থাকা স্বপ্নদোষ
কিংবা নিপুণ টোপের ওপারে মাছেদের গেলা না গেলা সন্দেহ

নিজস্ব বোধের অতল তলে সাজিয়ে রাখা ক্ষমার সৌন্দর্য
ঈশ্বরের হাত ধরে নিয়ে যায় জীর্ণ, কীটদষ্ট কাব্যের পাতায়
নতুন করে লিখিত হয় ইতিহাস, মর্মর জীবনের দুঃসহ গাঁথা।

বোধ থেকে ক্রমশ উঠে উঠে আসে লিখিত জীবনের কথামালা
নিজস্ব ভালোবাসার আকার ইঙ্গিতে ভাস্বর হয়ে ওঠে ঈশ্বরের মহিমা।




পাঠক্রম

শরীরে শরীর মিলে গেলে রাত্রি রচনা করে কবিতার ঢেউ
ভালোবাসা হয়ে ওঠে সীম ফুলের মতো নীলাভ বেদন
আলগা একটা নির্ভার জীবনে যত আলোর রোশনাই
তুচ্ছতার শেকড় উপড়ে নিয়ে আসে কাব্যের উদার আকাশ।

মিলে যায় রাতের অন্ধকারে আকাশের যত কালো রং
রাতচরা পাখির চোখে লেগে থাকা চৌর্যবৃত্তির মহিমা
সদ্য যুবকের বুকের ভেতর থেকে টেনে ধরে প্রথম প্রেমের সাজ।

রাতের দরজা জানালা দিয়ে ঢুকে পড়ে ভালোবাসার পাঠক্রম
শরীরের নিয়মে জাগে শরীর, কাব্যে লিখে যায় কেউ কেউ।




নিয়ম

ছায়াঘেরা নদীটির মৌতাতে মিশে যায় বাতাসের অভিমান
মিথ্যে সব প্রতিশ্রুতি রুগ্ন বিশ্বাসের দেওয়ালে লিখে দেয়
মন কেমনের ঠিকানা, রোজকার জীবনের সমস্ত ওঠা-নামা
কাব্য শেখাচ্ছে; দশ পা উঠতে গেলে নামতে হয় এক পা।

নিজেরই প্রেত রোজদিন জাগরণ লিখে যায় রাত্রির ঘুমে
অমোঘ নিয়ম দোষ খুঁড়ে খুঁড়ে নিয়ে আসে জীবনের রহস্য স্রোত
অবারিত মৃত্যুদ্বার যেন মন্ত্রমুগ্ধ ঋষিবালকের চঞ্চল অভিসার।

চাঁদের আলোয় স্নান সেরে নদীও হয়ে ওঠে রমণীর সহোদরা
তীব্র কামনায় জর্জরিত পুরুষ হৃদয় তখনও আঁকে নদীটির রেখা।




নিরাময়

পানপাত্র জুড়ে দাউ দাউ করে ভালোবাসার প্রহরগুলি
অসময়ের স্রোতে ভেসে চলা নৌকা বোঝে না স্রোতের মানে
কেবলই নিরাময়হীন সময়ের গায়ে লেখা হয় অসুস্থতার অহং
বাকি সব মিথ্যে প্রেমিকার মুখের বিচিত্র কোলাজের মতন

আপাতত তেমন কোনো সুসংবাদ পা মাড়ায়নি চৌকাঠের সীমানা
সমুদ্র স্নান থেকে নুন নিয়ে ফুটে ওঠে স্নিগ্ধ চরাচরের মায়া
আপাদমস্তক ভদ্র মানুষ নীরব দৃষ্টি দিয়ে মেপে যায় বিষণ্ণ

স্মৃতিমেদুর দিন পুড়িয়ে ফেলে বিলাসী আগুনের সব তেজ
প্রহর শুধু চোখ রাখে জানালায়, দরজায় রাখে অপেক্ষা।




জীবন

আজন্ম সেই কাঙাল জীবনের লালসা লেগেই রইল বুকে
কত পথ অতিক্রমের পরেও হিসেব মেলে না পথের
নির্গুণ আঁধারের মোহে ক্রমশ ডুবে ডুবে যায় সংসার
তেমন কোনো মুখের আদল জাগায়নি খিদে, কেবলই ছদ্মবেশ।

ভুল ঘটে যায় রোজকার পান্তাভাতে মেশানো নুনের হিসেবে
ঝাল ঝোল জীবনের অসাধ্য সাধন চাপা পড়ে ছাইয়ের স্তূপে
তবুও জীবন চলে কালীনাথ, কখনও বৃক্ষ কখনও ছায়ার ছদ্মবেশে।

নিমগ্ন দৃষ্টির অতলে মাছেরা গিলে খায় অযান্ত্রিক গিলোটিন
দুপুর গড়িয়ে বিকেল নামে, গৃহে সরষে তেলের সরস ঝাঁঝ…।