পোড়া শহরে

পোড়া শহরে বীণ বাজিয়ে তোমাকে চমকে দেবো একদিন
চমক থাকবে অনেকক্ষণ,
সঙ্গ দেবে চুড়ির বোঝা কাঁধে মেয়েটি

জল থেকে উঠে এসেছিল যে, কোনো একদিন,
মাটি পথ ডিঙোতে ডিঙোতে সে এসেছে তোমার শহরে

ভাঙচুর আর মানুষের নিজস্ব নির্জনতার মিছিলে
নিজেও চমকাবে নিজেকেই দেখে,
মানুষের ভাষা লুপ্তির উৎসবে যদি বাজে তেমন বীণ।

সংযোগ তৈরি করা অনুশাসনে, কমে যাবে আগুন উত্তাপ।




অনুশোচনা

নির্জন চাঁদের দিকে একা উদাসীন তাকিয়ে আছে সে
সে মানে বিনীত ঝাউগাছ, উঠোন পাড়ে একা
কার মনোবাঞ্ছা বুকে নিয়ে ঠায়

বাতাস এসে নাড়িয়ে যেতে চায়, তবু উদাসীনতা নিয়ে
সে ভাবে, শুধু ভাবতে থাকে, নিজের কথা, চাঁদের কথা
মেঘ এসে আড়াল করে যায় আরও যত কথকতা।

তার ছায়ার নীচে বনসাই হলো নিম,
নিশীথে আত্মাহুতি দিল তুলসী গাছ
তারপর মনমরা সূর্য নিয়ে সকাল, অনন্ত দিনের মেঘ
জড়িয়ে গেল কেমন করে নিজের সাথে, এ অনুশোচনায়




নিজের দিকে

বৃষ্টিপথ, ভেজা মাটির গন্ধ পেরিয়ে সাদাকালো এক সন্ধ্যে
কে তুমি কবি, ওপারের, অনাড়ম্বর আয়োজনে শুনিয়েছিলে
কেদারা বিষয়ক পঙ্‌ক্তি‌ এক দুই। তাৎক্ষণিক বিস্ময় নয়
আজ বহুদিন পর উত্তরাধুনিকতা যখন দুর্বোধ্য বাজখাঁই
আমি তোমার মুখ স্মরণ করতে চেষ্টা করি। কিন্তু স্মৃতির বিভ্রম,
আমি দেখি অদেখা তোমার পিতামহের মুখ। আমার উঠোনে
ডালিম ফুলের গন্ধ মেখে সেই কেদারা, পঙ্‌ক্তির সৌন্দর্য
অনেক পাখি উড়ে আসছে শ্রীহট্টের পবিত্র গুহার থেকে,
তাকে ঘিরে, অপরাপর ডাকনাম নিয়ে অনন্ত বিকেল বেলা
গড়িয়ে যেতে যেতে সন্ধ্যা হলে বেদনা নামে, তোমার মুখ
অন্ধকারের আরশিতে আমারই প্রতিচ্ছবি রচনা করে অবিকল
অথচ কেদারা নেই, কতিপয় স্মৃতি, মনে পড়ার এক জঙ্গল!




আত্মডুব

সব লেখা হয়ে গেছে। জীবন্ত যা কিছু, নিজেরাই তো বলছে
দুর্বিষহ এই গ্রীষ্ম দিন, তারও চেয়ে উড়ে আসা মড়ক
এমনকি মৃত্যুর কথা। ছেঁড়া মুণ্ডু, মৃতের ঘুঙুর
সব লেখা আছে এক ইশারা গ্রন্থের ভেতর।
সমস্ত আশঙ্কার কথা, ঘন অন্ধকারে পৃথিবী হারিয়ে গেলে
শেষ বাঁশি ফুঁ দেবে কে, সে সব-ও লেখা আছে
তবুও আমরা যারা লিখি ঘুম নেই ঘুম আসার কিছু আগে
চিহ্নের উপর হাত ঘোরাতে ঘোরাতে নিজেকে নিস্তেজ,
পাশ দিয়ে ডাক ওঠে এসে গেছে দুর্ভিক্ষ, মানুষের হাহাকার
আমরা বিছানা ছেড়ে আর উঠি না, ঘুম, কার্যকরী ছল তখন
হাত গুটিয়ে আসে, পালাবার পথ খুলে যায় কোথাও
অন্য কোনো স্বপ্নের ভেতর, ভীষণই ব্যক্তিগত, পালিয়ে বেড়াই




অনাগরিক

আমি তাকে দৃশ্যগত এক নদীর ছবি দেখাবো ভাবি
সে আমাকে শোনায় অন্তর্গত সমুদ্রের কথা
মানচিত্র টানলে ছায়া দূরত্বে সে থাকে
তবুও কত যে দূরত্ব আমাদের
একটি বেদন রেখায় মিলিয়ে আসে, নদী থেকে সমুদ্র;

তার বাবা মরেছে ডিটেনশন ক্যাম্পে
আমার বাবা হারিয়েছে অস্তগামী সূর্যের পথ ধরে
তার নাচ ফুরিয়েছে আর আমার স্বপ্ন দেখা
সে আমার গল্প বলা বোনটি যেন যার সাথে নেই দ্যাখা

বাবা মরে গেছে, এই বোধোদয়ে মিশে আছে—
রাত্রির চরাচর আর কুয়াশার বিনাশস্য জমি পথে
কী যে অমূলক পৃথিবীপট, নাগরিক ছবি আঁকা…