চৈত্র, ১৪২৬

আমরা যারা থেকে এসেছি সম্বৎসর বৃষ্টির পাশের বাড়িতে
আমরা যারা দেখেছি আকাশে সাগরের উচ্ছ্বাস
আমরা যারা চৈত্র বলতেই বুঝতাম হিমেল হাওয়ার পর্যটন, ঝড়, বিদ্যুৎ

আমাদের আজ বড়ো সংকট, ভাতের গন্ধ
হারিয়ে গিয়েছে স্নেহাস্পদের বাকে
উলঙ্গ মা নিদারুণ ছুটে যায় পথে পথে
ধুলো বালি ছিটাতে ছিটাতে
মজা দ্যাখে ছাপান্ন ইঞ্চির বালকেরা
করুণা চায়নি কেউ তবু দ্যাখো লুণ্ঠিত‌ স্বাধীনতা।

নব্যপ্রস্তর যুগ শেষে এক নবযুগ আসবে আবার
এই তো চেয়েছে বন্ধুরা
তাদের আকাঙ্ক্ষার তাপে গলে যায় পাথর
তবু আজ তারা শাস্তিপ্রাপ্ত
তাদের রক্তের নুন চেটে খায় কপিশ বর্ণের শৃগালেরা।

পথ বেঁধে দিয়েছে আমাদের বন্ধনহীন গ্রন্থি
হয়তো মৃত্যু হবে
তবু মৃত্যু-উত্তর এক ভালোবাসা ডেকে নেবে আমাকে তোমাকে
তার নিজস্ব শাদা গোলাপ বাগানে।




স্রোতস্বিনী

স্রোতস্বিনী, অন্ধকারের রং খুঁজিবার মানসে
আমি গিয়েছি তোমার কাছে,
তুমি এক টুকরো জলের তরঙ্গ
তুমিই পাথর
পাথরে জীবনের অভিসার।

কীভাবে উড়েছো তুমি, স্রোতস্বিনী, আকাশে
মেঘ নেমে আসে জানালায়,
আমি জানালার বন্দনা করি,
লুকিয়ে পড়ো তুমি বারবার
হলুদ গমের খেতে।

স্রোতস্বিনী, আমাকে পথ চেনাবে না
যেই পথে গিয়েছেন বুদ্ধদেব
কিংবা আজকের জামলো মাকদোম,
বিষণ্ণ‌ হলুদের ঘোরে ভরা
তরল পাথর। সেই অন্ধকার।




কাজ

আকাশে, ধরাছোঁয়ার মধ্যের আকাশে, উড়ে যাচ্ছে
সবুজ টিয়ার দঙ্গল।

জোহরা আট বছরের মেয়ে ছুটি দিয়েছে তাদের।

টিয়াগুলি উড়ে যাচ্ছে চোখের বাহিরে।

আর জোহরা চব্বিশ ঘণ্টার কাজের মেয়ে,
সেই মেয়েকে নিয়েও কাজ করত মালিক,
ব্যথা পেত খুব
বলেনি কাউকে।

ছেড়ে দিয়েছে টিয়াগুলি
একটা একটা করে
আর হেসেছে প্রাণভরে।

প্রাণের মূল্যে প্রাণ দিয়েছে জোহরা। এক্ষেত্রে রাওয়ালপিণ্ডিতে।

পয়গম্বর নেমে আসেনি কোথাও।

জোহরা মারা গেছে।




রামনাম কেবলম

আর ফেরা যায় না অমলে বিমলে নির্মলে
আর ফেরা যায় না মেঘে, ফুল্লকুসুমদলে
যে মেঘ তুমি সৃষ্টি করেছিলে
সানগ্লাস পরে,
‘কত দিন পরে দেখা হলো আমাদের’ বলে পর্দার ভিতর
ছায়াচিত্রের ভিতর
কিংবা চলচ্চিত্রের অলীক মায়ার সকাশে, ভিড়ে
মিশে গেছো,
নারীর জ্ঞানের প্রতি
সিন্ধুঘোটকীর প্রতি যেমত সমুদ্রের
মোহ ছিল আমার,
সে মোহের স্মারক জিনসের প্যান্টালুন, ঘড়ি ও নীল বোতাম
আমি উপহার দিয়েছি এক পোঁদপাকা ভিখিরিকে
যে তৃতীয় প্রহরে আমাদের ভাঙা বাড়ি গলি রাস্তা ধরে
গেয়ে যায় রবিবাবুর অসহ্য সংগীত
দূরে কোথায় দূরে দূরে…
আমি আর ফিরতে পারছি না
স্বপ্নে মনে হয় রবীন্দ্রনাথের কুষ্ঠ হয়েছে
সেবিকাসত্তা হারিয়ে তুমি ঢুকে যাচ্ছ অবিরাম
এমএ পোড়োদের ক্লাসে,
আমাকে ঘিরে থাকে যে সকল উদ্ভিদ
তারা ‘সাব অলটার্ন’ কথার মানেই বোঝে না
তুমি বোঝো কেন সোনার চামচে স্থিত সেদ্ধ ডিম কাঁপে!




দিল্লি, ২০২০

রজনি! আমার ঘুম ভাঙিয়ে দাও
ত্বরা করে।

আমার ছেলেটির ফিমার বোন ভেদ করে
ছুটে যাচ্ছে বুলেট,
আমার ছেলেটির শিরদাঁড়া ভেদ করে
ছুটে যাচ্ছে বুলেট,
বুলেট শরীরে নিয়ে হেঁটে বেড়াচ্ছে ছেলেটি আমার।

শান্তির ললিত বাণীতে স্বস্তি পায় না আর
দিব্যাঙ্গ ছেলেরা আমার
ওরা মনের জোর খুঁজে নিচ্ছে কোরানে
বাধ্যতাবশত,
বাধ্যতাবশত
ওরা চলে যাচ্ছে সহস্র সহস্র যোজন দূরের আলোকে।

ঘৃণার থুতুর কফের পিত্তের গেরুয়াজলের
এক সমুদ্র আছড়ে পড়ছে ওদের মাথায় মুহুর্মুহু
ওরা মুসলিম ওরাই টার্গেট।




ফেরা

কবিতা কোথায়
কবিতা ফোসকা পড়া, ফাটা, বুড়ো আঙুলের নীচে
হাঁ হয়ে লাল মাংস বেরিয়ে আসা
পায়ের সকাশে।

এইসব পা আর অন্তহীন রাস্তা

কখনও পিচগলা, কখনও এবড়োখেবড়ো, জঙ্গুলে কখনও টুকরো পাথর ছড়ানো
রেলপথ।
মধ্যরাত্রেও হাজার সূর্য জ্বলে পেটের ভিতর পৃথিবীর
জীবন মৃত্যুর মাঝে সুতোর ব্যবধান হারিয়ে গিয়েছে।

কালকের আকাঁড়া শব্দগুলি
লেখা হয়ে যাচ্ছে আজ সময়ের শাদা পিঠের ওপর।