লক্ষ্যভেদ

অর্জুন তুমি কী দেখছ?
ছায়া।
আর?
একটা লোক।
আর?
শুধু দুটো চোখ
ভালো করে দেখো তো অর্জুন…
গুরুদেব, একটা চোখ
আরও ভালো করে দেখো…
একটা অনুজ্জ্বল মণি
এবার?
মণির ভিতরে একটা মুখ
আর
মুখ নয় একটা ছায়া
না ছায়া নয় একটা লোক
না না লোক নয় চেনা লোক
খুব চেনা… একটা মুখ… আমি
এখনও কি দেখতে পাচ্ছ?
হ্যাঁ, গুরুদেব, চোখের সামনে অন্ধকার আর আমি…
বিদ্ধ করো অর্জুন… পারবে না?




আমাকে ধন্দে রেখো প্রিয় সভ্যতা

আমি এখনও ঘুম থেকে ভুল করে চোখ খুলে ফেলি

জানি এই কাজের শাস্তি দাবি করে মিছিল বের হলে আমিই প্রথমে থাকব
জলকামান ভাসিয়ে দেবে জামার কলার

অথচ আমি ভ্যাবলাই থেকে গেছি

এরপর আমি ঠিকঠাক সাজিয়ে নিতে শিখে যাব
প্রিয় করিডোর ধরে হেঁটে দেখে আসব
বকুল ফুল ফুটে আছে বুকে
তবে কেমন যেন ছেতরে গেছে ফুসফুসের পর্দা
রক্ত ভেবে আবারও ভুল করে ফেলেছি

জানালার কাচে ধুলোর দাগ
চশমা খুলে রেখে ঘুমোতে যাওয়ার অভ্যেস তৈরি করেছি

আমাকে ক্ষমা করে দিও সভ্যতা
তোমার জন্য আমি দুঃখিত

বারান্দায় বসে আছি এখন
এদিকে আর কেউ আসে না
দুর্গ পতনের শব্দ একা বসে শুনি

নীল সবুজ আলোর গিলোটিনে মাথা গলিয়ে রেখেছি রাতদিন সাতদিন
এবং জানি সভ্যতা তুমি ক্ষমা করে দিয়েছ

এখন আর চোখ খুলে ঘুমোই না
চোখ বন্ধ করে আকাশ দেখি না আর।




এ জীবন বাতিল

এ জীবন মধ্যবিত্ত
এবং আমি তোমাকে বাতিল ঘোষণা করেছি

তুমি অন্ধ স্নেহে ঘিরে ধরছ
উসকে দিচ্ছ স্মৃতি
অথচ নিজেকে গড়ে পিঠে তৈরি করে নিয়েছি ফাঁসুরের দক্ষতায়
রোজ রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে দড়ি ঠিক করে রাখি
গলার কাছে রেখে দিই মোম
কালো কাপড়ে অন্ধকার বেঁধে ঝুলিয়ে দিই
ঘুমিয়ে গেলেই চোখ ঠিকরে যায়

মধ্যবিত্ত জীবনে চোখ খুব গুরুত্বপূর্ণ
চোখের নীচে কালি ওপরে কালি
যেন সরকারি ছাপ
দেখলেই বোঝা যায়

তোমাকে ঘেন্না করি
তোমাকে ভালোবাসি
তোমাকে রোজ রাতে ঝুলিয়ে দিয়ে ফিরে আসা পথে প্রশ্নের উত্তর দিই
অথচ বেতাল ফিরে যায়
মাথা ফেটে চৌচির হওয়ার আগে
হে মধ্যবিত্ত জীবন তুমি আত্মহত্যা করো




ফাঁদ

ওঁত পেতে বসে আছি ফাঁসের মুখে
এই বুঝি সময় হল গলে যাওয়ার
অথচ খুঁজে পাচ্ছি না বালিঘড়ি
রোদের সাহস নেই সোজাসুজি হাঁটার
পিছনে থেকে যাচ্ছে দেওয়াল
পিঠ রেখে ফাঁদ পেতে বসেছে ঘুঘু
নিজেরই ভিতর কেবল প্রবেশের দ্বার
বাইরে যে এসেছে সে শুধু দেখেছে জগৎ
এ ঘোর বাস্তব ও কলিকাল
ফাঁদে পড়েছে বগা
আমি ঘুঘু হয়ে গেছি

গাছের ছায়া মিলিয়ে গেছে আমাদের পাড়ায়

যে ছায়া দেখে বাড়ি ফিরতাম রোজ
তার মুখে নেমে এসেছে আলো

ফাঁসের ভিতরে গলে গেছে বলিরেখা
আত্মহত্যা সফল হল না বলে অভিযোগপত্র জমা দিয়ে এসেছি সূর্যের বিরুদ্ধে




সুইট হোম

শোনা গেছে গৃহঋণে সুদ কমে গেছে

এবার সবার বাড়ি হবে
বাড়ির সামনে লন
তাতে ঘাস ও ঘাসকাটা যন্ত্র
যার ভালো নাম লন মোয়ার

মসৃণ ঘাসের ডগায় পিছলে যাবে ভোরের শিশির
একা একা দোল খাবে শিশু
দোলনায় চাঁদ ফুটবে টগবগ শব্দে
গরম জল ঠান্ডা জলের কল
ভ্যাকুয়াম ক্লিনার
ঝকঝকে পালিশ করা গা
দেওয়ালে ধুলো আটকালে সুদের হার বেড়ে যেতে পারে

এইমাত্র গৃহপ্রবেশের পুজো হল

আর শতদল থেকে খসে পড়ল আলো
চাঁদের দেওয়াল জুড়ে বাঁশের বাতা
নারকেল দড়ি ও প্যাটারি ফুলের আগমনী ছাপ
বৃত্তাকার যেন বলিরেখাময় মাটির দেওয়াল

ভেজা খড় ও কালো মেঘ ঝুলে আছে গাছে
অদৃশ্য সুতোর ভিতরে ছুঁচ গলে যায় শুধু

যদিও গৃহঋণে সুদ কমে গেছে এ খবর
বৃন্দাবন বারুই জানত না