ময়ূরাক্ষী

১.
ভালো আছ ময়ূরাক্ষী এই জলকষ্টে খরাশোকে
কালচক্র রোষে কাঁটাগাছ বিঁধে দিয়েছে শিকড়
জমে থাকা রাগ, ঘৃণা শুষে নেয় মোমবাতি
অন্ধকার ঘর
তবু নক্ষত্রের দ্যুতি নিয়ে আলাদিন মরা চরে
দিঘি হয়ে জেগে থাকে

আশ্চর্য সময় এক, জোয়ারের স্রোত নেই
নেই মাঝিমাল্লারের বিরাগের লোকগান
খাদের ধৈবতে খোঁজ নিয়ে দেখি লন্ঠনের
আলোয় শায়েরি লেখে গালিব, জীবাশ্ম থেকে
খুঁটে খুঁটে মাত্রাবৃত্ত ছন্দে

তাহলে বাণের ঘণ্টা; বাজবে এইবেলায়…
পাথরের ঘুমঘোর থেকে উঠে বসো

২.
ডুব দিয়ে পৌঁছে যাই অতলের কেন্দ্রে। জলজ উদ্ভিদ বাকলের
শয্যা নিয়ে আসে। বন্য গন্ধে নেশা হয়।
সামনে দণ্ডায়মান চর্যাপদ। জোনাকির
ফসফরাস তুলে দেয় হাতে। ঢোঁক করে খেয়ে নিই।

এখন বারুদ জ্বলে ওঠে যদি, অকস্মাৎ… নদীগর্ভে আগুনের তাপ; সৃষ্টি
রসাতলে যাবে

ঘোর কেটে যায়… অসীমের এই নাভিতটে এসে হাত খুলে দাঁড়াই; গ্রহাণুপুঞ্জ
ধরা দেয় পাখি ছদ্মবেশে।
ডানা লিখি। সাদা অক্ষরের ভ্রূণ, সমাধির শিকল
গুঁড়িয়ে উঠে আসে; ঘুম ভাঙেনি তখনও। চোখে লেগে আছে মৃত্যুকথা।
গতজন্ম মুছে দিয়ে কলমে ধারণ করি।

৩.
খুঁজেছি অনেক চলে গেছে অন্তহীন
শোকগ্রস্ত; ছুটে গেছি বাউলের দরবারে
গোপন যা কিছু সমর্পণ করেছি পায়েতে
একতারা চুপ
হয়তো অপেক্ষা করতে হবে
কালচক্রে সূর্য যখন ঈশানে
কালো মেঘ কেটে যাবে তাপে

৪.
ছোট ঢেউ কেটে নৌকো ভাসে
বৃদ্ধ মাঝি এই মৃতপ্রায় নদীবক্ষে সুর ধরে
গানের সাথেই নাকি বৃষ্টি নামে; আরও একটু
বৈরাগীর বেশে থাকো মাতা…

ওদিকে চড়ার মাঝামাঝি চিত হয়ে শুয়ে আছে
মাছের শরীর; হাত দিয়ে দেখে শ্বাস নেই
এখনও প্রতীক্ষা
পুড়ে ভস্ম হয়ে গেছে গর্ভ

ছায়া নেই; শেষ ডোম্বীনীর পরিচয়েই কি সমাপ্তি টানবে
বাদুড়ের জাদুবিদ্যা…
বুকেতে আগুন নিয়ে বেঁচে
থাকে ‘মা’ যক্ষিণী হয়ে সমাধির পাশে

৫.
পড়ে আছে মরা চর ধু-ধু…
শ্যাওলার আর্তনাদ চোখে জল আনে
মরু ক্যাকটাসে জন্ম নিয়েছিল লোভ
ভাটিয়ালি অসুখের তাপ

এই জ্বর ভালো…

সিন্দুকের চাবি চোখে সরে যায় বাসি মেঘ
আহা রৌদ্রছায়া
জল কুমারীর নৌকা বাঁধা আছে ঘাটে
উঠে পড়ে উজানের প্রেম
শব্দে শব্দে লেখা উপাখ্যান

দহন শুকিয়ে গ্রহদোষ কেটে যায়
এই জ্বর ভালো

৬.
দাঁড়কাক বসে আছে ডাকবাক্সের
ওপরে আগুন চোখে; ওরে জল আন
কালের ভিক্ষুক…

রানার গিয়েছে মরা চরে চিঠি খোঁজে
ঈশ্বরের চোখ বাড়ন্ত সেখানে
চিল শকুনের অট্টহাসি ঘুঘু চড়িয়েছে

আশ্চর্য সময় এক
নেই বসন্ত, পলাশ; হাঁড়িয়ার নেশা
রানার পাবে কি পদাবলী
খামে মোড়া অভিসার পত্র

৭.
জমা অভিমান ভেঙে ঝড় আসে, ছিঁড়ে দেয়
অভিসার পথ; টানেলের গায়ে রক্ত লেগে
বৃষ্টিকণা ধুয়ে দেয় যাবতীয় লাল দাগ

প্রেম মুছে যায়…
আর্তনাদ শুনেছিল পাড়ে বসে থাকা জবা
দহনের ভাষা শুধু ভস্ম বোঝে, কান পাতা দায়
জল ঢুকে আসে কোষে কোষে
মৃত জীবাণুর লার্ভা ভেসে যায়; বংশধ্বংস হয়
অভিশাপ দিয়েছিল ধাত্রী মনে নেই

ময়ূরাক্ষী তুমি তো রমণী
অহল্যার কালাশৌচ দেখেছিলে যুগ যুগ ধরে
এ অসুখ সেরে যাবে; এখন বৃষ্টিতে শান্ত হও…