কখনো মনে হয়

লোকালয়হীন ধু-ধু প্রান্তর
রেলগেটে দাঁড়িয়ে আছি
পেরিয়ে যাচ্ছে এক দীর্ঘ
শ্লথ, অনন্ত মালগাড়ি

চারের দশকের
এক একচল্লিশ
খেটো ধুতি, হাতে সাইকেল

সামনে পেরিয়ে যাচ্ছে
অনন্ত মালগাড়ি

দাঁড়িয়ে আছি সেই থেকে




এক সকাল দশটায়

বাতাস থেকে বারুদ আর অস্ত্র কেড়ে
শীতকে রোদ দিয়ে মাখলে

নরম ওম জাগে পৃথিবী আঁচলে

আঁচল না, শাড়ি না, চাদর
সঠিকের মাপকাঠি ভাবনায়
আসে যায় আসে যায়
ডিসেম্বর, পৌষের দোসর
তারই কোনও এক সকাল দশটায়

পালং-এর সাথে মেথির মিতালি
শালগম ফুলকপি ব্রকোলিরও তাই
বাজারের থলে এসে মেঝেতে গড়ায়

পৃথিবীতে আর কোনও উদ্‌বেগ নেই
কোনও এক বছরের কোনও এক
সকাল দশটায়




নিয়তি

অর্থবাহী ধ্বনিত শব্দস্রোত
আড়ালে সমান্তরাল
অনর্থ প্রবাহের অনুরণন

নিঃশব্দ কারখানায় ডুবুরি

ভিনরাজ্যে যাওয়া কারিগর

উপলব্ধির অনাঘ্রাত আহরণ
ধু-ধু নিঃসঙ্গ ভার্জিন মানচিত্র
অন্তর্জগৎ বহির্জগৎ সৌরজগৎ

সেই তবে ধ্যান, তাড়া খেয়ে বাধ্যত
যার নাম গ্রাস, বর্জনের পাঙ্গায়
শূন্য অর্জন
পৃথিবীর কুলে কুলে নিষিক্ত ঢেউ
মান্যতা না পেলেও তারা কবিতা লিখবে




ঘোড়া কথা

ময়নাগুড়ির রিসর্টে মহিনের ঘোড়া ঘাস খায়
মালিকানা বদল সদ্য এসেছে
উটের মূত্রগন্ধ সমুদ্রতীর ছেড়ে
সামান্য বুনো টাচ অরণ্যের কৃত্রিম গভীরে

আদিম বাসভূমি হয়তো ফেলেছে দীর্ঘশ্বাস
কানে কানে বলেছে দুরন্ত আরণ্যক পিতামহ কথা
হর্স রাইড অভ্যস্ত পিঠের বসে যাওয়া কেশর
ফুটেছে ফের কাশফুলে সার বেঁধে
এখন পিঠের চামড়া তোলে তীব্র কম্পন
কোনও এক মহিমের মইদুলের ঘোড়া
রিসর্টের পণ্য বাগানে ঘাস খায় হাওয়া মাখে
বর্তমানের মালিকানা অরণ্য সংক্রমণে
অমান্য করে এতদিনে
হর্স রাইড প্রোগ্রাম মার খায়




ট্যুরিস্ট কথা

যেতে যেতে সমবয়স পাহাড়, পাকদণ্ডী
বাকলের রোমশ বেয়ে নেমে গেছে
অশ্রুদাগের মতো শুকনো খাতগুলি
কিছু ফাগুন শ্রাবণ, কিছু পূর্ণিমা জানে
তাহাদের বেঁচে ওঠা অকস্মাৎ কথা
আর জানে বেত্রাহত কুকুরের ত্বকের
কম্পন, কনকনে তীব্র শীত রাতে

পাহাড়ের রোম ঝরে, শুভ্র হয়
অরণ্য বাকলের পরত ধূসর কর্কশ
খাতের ক্ষতের কোনও নিরাময় নেই

নেই কোনও ভরাটের দুর্বাঘাস কোমলতা
তান্ত্রিকের মতো নামে অদৃশ্য জলধারা
হঠাৎ হড়পায় শুধু
তাদের কারও নাম সেন কাকিমা
কেউ সরস্বতী পুজো, কেউ কলেজ হোস্টেল
নার্সিংহোমে বাবা, এমনকি লোকাল কাউন্সিলর

পাহাড় পর্বত হয়, সুদূরের দৈর্ঘ্যে বাড়ে খাত
আয়ুর উচ্চতায় তুমুল ভালুক জ্বর নামে আচম্বিতে
কোন খাতে কখন যে হবে অকস্মাৎ

জল নেমে গেলে পাথর ফোটে ফের, শুষ্ক হয়
ট্যুরিস্ট মানুষজন সেই খাতই দেখে যায়
পাকদণ্ডী বেয়ে