ভ্যালেন্টাইন’স ডে

আজ সারাদিন ল্যাপটপ খোলা রেখেও
একটি লাইনও লিখিনি
আজ সারাদিন দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ ছুঁড়ে ফেলে
ফ্রয়েডীয় তত্ত্ব ঘেঁটেছি
ইগলিসিয়াস, লুইস ফোনসি, দোমো এমিগ্রান্তে কিংবা
ওয়েস্টার্ন ক্ল্যাসিকাল বন্ধ রেখে
শুধু তার পাঠানো লিঙ্ক খুলে শুনেছি:
‘ওগো, মনের দুয়ারে দাঁড়িয়ে থেকো না…’
‘চিনেছি চিনেছি তোমারি মন…’

আজ সারাদিন মন্ত্রীদের মুখে কাদা ছোঁড়া হয়নি—
বইমেলায় পাওয়া তার আতরের শিশি গায়ে ঢেলে
প্রাণের আনন্দে বিছানায় দাপিয়েছি
আজ সারাদিন তার মিষ্টিমুখের ছবি
বুকের ওপরে রেখে
চোখ বন্ধ করে শুধু কেঁদেছি!

আজ সারাদিন আমি চ্যাট করে গেছি
একটি কবিতাও লিখিনি
একা ঘরে তার নাম ধরে বারে বারে
তাকে ডেকেছি: এক্স! এক্স! এক্স!

আজ ভ্যালেন্টাইন’স ডে
বহু পুরোনো সেই মিথ্যে প্রেমের চিঠিগুলি
আমি কুটিকুটি করে ছিঁড়ে
ফ্যানের হাওয়ায় উড়িয়েছি!




কামকুম্ভীর

সিন্ধি ভৈরবী শুনতে শুনতেও
  প্রফুল্ল হলো না মন
কী পাষাণ আমি!

ব্রজে ব্রজে ঘুরে
রতন খুঁজেছি যতন নিয়ে, অহোরে!
পথের ধূলি চিনিনি

দিনে দিনে
খসে পড়তে লাগল রঙ্গিলা দালানের মাটি
রাতজাগা আসরে যাওয়ার ঝোঁক
বেড়েই চলল
নাচনীদের সঙ্গে জীবন মেলাতে গিয়ে
মহাজনী পদ লেখা ভুলতে বসলাম

কিন্তু তারপরেও
নারী-জীবন জানা আর হয়ে উঠল না!

এখন স্বপ্নের মধ্যেই শুনি
ঢোল-মাদল-ফুলেটের ঐকতান
দর্শকের কোলাহল
আর
নর্তকীর অস্থির পায়ের মুদ্রায় বেজে চলা
চার-চার গাছি
বাঁকড়ি ঘুঙুরের ধ্বনি

বড় বেদনা জাগে
কামকুম্ভীরের টানে আমি
ভাবজগৎ থেকে কোথায় যে সরে গেলাম!

আমার আঁশু কখনোই
তোমার পায়ের ঘুঙুরে ছলকে পড়ল না!
হে নর্তকী, সৃষ্টির ধুলায় আমি
লীন হবো কেমনে?

আর কি কখনও ভস্মস্তূপ থেকে
জেগে উঠবে আমার স্ফুলিঙ্গ?

কী ভুল করেছি!
জীবনকে আমি বইতে দিলাম বৈঠা ছাড়াই…

মনমাঝিরে, ভাটার টানে আর না যাইও!




সারস্বত বন্দনা

যত প্রেম আমি তোমাকে করেছি
সেই প্রেম দিয়ে যদি বাঁচিয়ে রাখতাম
বাগানের গাছগুলি!
আমি নির্বোধ অতি
মিছেই মগ্ন ছিলাম তোমার মায়ায়
বন্ধ্যাত্ব পূজনে সময় গেল
  আমার সাধন হলো না!

যত কথা ললিত ভাষ্যে বলেছি তোমাকে
যদি সেই শব্দনিচয় দিয়ে
রচনা করতে পারতাম
  কতিপয় মহাজনী পদ!
আমি নির্বোধ অতি
তোমার অপ্রকট কপট রঙ্গে
অবহেলা করেছি আমার
  আখর-লালন ধর্ম!

অস্তমান সূর্যের দিকে তাকিয়ে
কেন যে গোধূলি লগ্নে তোমার
  অঙ্গরাগই দেখি
আমি নির্বোধ অতি
সিঁদুর গাছের বীজ হাতের তালুতে ঘষে
দেখতে চেয়েছিলাম সীমন্তিনীর রঙ

এখন তোমার উদ্ধত চরণ থেকে সরে
পাষাণে কুটছি মাথা
আর
অতীতের কৃতকর্মের বেদনা নিয়ে
অনুভবে-অনুশোচনায়
লিখতে চাইছি দু-পঙ্‌ক্তি সারস্বত বন্দনা…




হে পবিত্র কণ্টক

যখনি বুদ্ধের মার্গ অনুসরণ করতে চাইছি
শয়তানের দল এসে দাঁড়াচ্ছে আমার সামনে
বলছে, ‘ফিরে যাও!’

এত অন্ধকার!

এত অন্ধকার আগে কখনও দেখিনি
একা হাতে তাদের কত দূর
ঠেলে নিয়ে যাবো, বলো?

ধাঙড়দের গ্রাম থেকে শবরপল্লিতে ঢুকলে
অবুঝ কুক্কুরের দল হাঁপাতে হাঁপাতে
কর্কশ ডাক ছেড়ে ছুটে আসে
আমি অবিচল—তোমার কথা ভেবে
আমি নির্বিকার
অখণ্ডকালব্যাপী গম্তব্য অনুসরণ করে চলেছি

মহাবীরের বেশে উলঙ্গ আমি
কেউ না কেউ
হিংস্র প্রাণীসকল
আমার দিকে তো লেলিয়ে দেবেই

তুমি মাথার ওপরে হাত রেখেছো বলে
আমার করতলে ফুটেছে চির-অম্লান গোলাপ

হে নিষ্কলুষ পবিত্র কণ্টক
আরও রক্তপতন ঘটাও
আমার তর্জনীতে

প্রতিটি পাপড়ির কাছে রেখে যাবো
অনিঃশেষ সমর্পণ…




দুঃসময়

যখন অশিক্ষার শকুনেরা নামে
দেশের ভাগাড়ে
ফুচকাওলাও চ্যালেঞ্জ করে
  অমর্ত্য সেনের নোবেল

আঁশ-বঁটির সামনে হাঁটুর লুঙ্গি টেনে বসা
মালখোর মাছওলা গুনে গুনে
  পেটির পিস বের করে
রক্তমাখা হাতে সবিস্ময় চেয়ে বলে,
‘শঙ্খ ঘোষ? উনি আবার কী কবি?
কবি তো নজরুল—ঘরের এই ভাঙা কপাট…’

দলে দলে ওরা কপাট ভাঙছে, দেশের
ভেঙে ফেলে করছে লোপাট…

এমন দুঃসময়ে
তালের একটি শুকনো আঁটি কুড়িয়ে পেলেও
  পুকুর পাড়ে পুঁতছি আমি

শক্ত সুঠাম আকাশমুখী একটি বৃক্ষ জন্মাক