ধন্য হোক পুন্য রাজার দেশ


১.

চোখের ভিতরে পুড়ে গেছে যা কিছু দেখার
তুমি আলোকে বললে স্তব্ধ হও
আজ কতদিন আটকে রয়েছি—
পশ্চিমমুখী দেওয়ালে
সম্পর্কের সংকোচন দেখি স্পষ্ট
আরও কত ছড়িয়ে রয়েছে চারদিকে



২.

ওই দূর থেকে শুরু হয়েছে কাঁটাবন
মাথার ভেতরে কোনো তেপান্তরের মাঠে তার শেষ
শ্বাসকষ্টের মতো ছোট হয়ে আসা
এই দিনের সঙ্গে তারও আবসান দেখে যেতে হবে
তপ্ত লাল শিরার মধ্যে দপদপ করছে নীলাভ ডেটোনেটর
এতদিন পর নিঃস্ব জালকাঠি মোমছাল আর সিক্ত গন্ধকের
কাছে এসে বুঝি বিস্ফোরণ না হলে অবিকল
নিভে যাওয়া ভালো
তবে তার আগে অপ্রমাণ করে যেতে হবে
ভুল তথ্য সব ভুল জল আর অভিজ্ঞানের ছোট ছোট
ভুল খাঁড়িগুলি।



৩.

তুমি দেখেছিলে আগুন
ভয় পেয়েছিলে
আর আমি দেখি শান্ত নিভে আসা
ফিরে যাবার মিছিলে মিছিলে
ঢেকে যায় ভাষামুখ
প্রত্নজীবন থেকে সামান্য খুঁড়েছি বলে
আবার বিষগাছে ছেয়ে গেছে দশদিক
এর চেয়ে কৃপামৃত্যু ছিল ভালো
আরও ভালো কীর্তিনাশার জলে
যদি মুছে ফেলি আয়ুরেখা
রংরুট এই প্রাণ থেকে
ফাগুনের নিঃসীম গান থেকে এই নাও
জিভ খুলে দিই আজ
তোমারি জয় চাই বলে



৪.

পারি না দিতে মন
কেন পারি না দিতে মন
বনস্থলী হঠাৎ আসে কাছে উড়াল দিলে মনের পাখি
আমার আছে পাথরগুলি তুষাররঙিন
পাহাড় পাহাড় খেলা
দেখা হলো নাঙ্গা পাহাড় হাড়ের ভেতর নগ্ন নিশান তোলা
তপোবনের পথের নীচে দাঁড়িয়ে ছিলাম পা রাখিনি তবু
ভেতরে শীত জবুথবু চিন্তাগুলি আখর পাবার আগেই
উৎসে কাতর উৎসমুখে উচ্ছ্বসিত শিলা ভেসে যায়

এমন দিনে, শুধু মেঘলামেদুর এমন দিনে পিছন ফিরে
মুখোশ খোলা—
নীলাভ মায়া ঢেউয়ের মতো সবুজ বন্ধুরতার
মাথায় মহান সাদা ফেনা তার কাছে খুবই গোপন কথার মতো
দিলাম আমার স্বোপার্জিত খর্ব জীবনখানা
যেন উড়াল দিল মনের পাখি তুষাররঙিন আকাশসীমায়
সব চেতনা হাহাকার যেন বনস্থলী
হঠাৎ আসে কাছে



৫.

আলোর বিন্দুগুলির সঙ্গে
ধূসর কোষের সেই আলতো খেলা
নিয়মমাফিক নিভে গেলে—স্তিমিত আঁধার দেখি
দেখি না-দেখার পাপে ডুবে যাচ্ছে এতদিনের অর্জিত খাঁড়িগুলি
এত জল অথচ পাপমোচনের জন্য জল নেই কোনো
কররেখার মতো দীর্ঘ আর স্থায়ী আর তার সামান্য চেতনা ভুলে
খুব করে গেয়ে উঠি গান

তোমার কোনো মুখ নেই এ কথা ঠিকমতো বুঝতে কেটে গেল
এতগুলো দিন—আজ আর তেমন অনুরাগ নেই
ক্রোধহীন স্তিমিত আঁধারে স্থির নিশ্চিন্তে ছোট হয়ে আসছে
চিলেকোঠার এই ঘর
আলো বেঁচে থাকার দূর সলপোয়া*
তীব্র ইচ্ছের ঢাল বেয়ে ওঠানামার স্পৃহা জাগিয়ে
রেখেছিলাম এতদিন—আজ প্রত্যাহার করে নিচ্ছি শেষবার
নিজের বিরুদ্ধে ব্যবহার করব বলে



৬.

সাত ঘাটের জল খেয়ে ছেড়ে দিয়েছি এইসব সখ-শৌখিনতা
সন্দেহের কূটকচালি বিষগাছের নীল ধোঁয়া আর সাদা জুয়াচুরি
থেকে বাঁচিয়ে শব্দকে খুব এক শুদ্ধ গভীরতা দেবার
দিবাস্বপ্ন দেখি না আর
দেখি ক্রমশ বিক্রি হয়ে যাচ্ছে সেই স্বপ্নের বাড়ি
গাছগাছালিসহ পঁচাত্তর বছরের সব হিসেবনিকেশ
দেখি চিতা জ্বলে উঠলে ফের ছাই আর তীক্ষ্ণ
ধূসর রঙে ঢেকে গেছে চারদিক কাছের আকাশ
পূর্ণ কলসির জল আজ ঢেলে দিই চিতাকাঠে তারপর
ভেঙে ফেলি আধার আর আধেয়র মায়াবী সীমারেখা
সমস্ত আড়াল আর মিথ্যে প্রতিমা মুছে সত্য হয়ে থাক শুধু
আজ এই সৎকার ওঁ মধু ওঁ মধু ওঁ মধু ওঁ মধু



৭.

বাইরে কোথাও লুকানো মেঘ ভেতরে কোথাও লুকানো মেঘ
খুঁজতে খুঁজতে মধ্যপন্থী শরীরে আজ শব্দ হলো নীরবে খুব
শেকড় ছেঁড়ার শব্দ হলো শুকনো ডাল হাওয়ায় হাওয়ায়
কাঁপছে গাছের হলুদ পাতার এই দোলাচল বধির বাতাস
বুঝতে পারেনি বৃষ্টি এবং ঠান্ডা আগুন দেখেনি এই সরে যাওয়া
পায়ের নীচে মাটির ধাঁচে পলায়মান বীজানুযাপন
মধ্যে ক্ষয় অক্ষরময় সামান্য সব ছবি আঁকা ব্যথার টানে
যেন ঘুম ভাঙানোর চিতার দিকে সস্তা কিছু প্ররোচনা যেন
লুকানো মেঘ বাইরে থেকে প্রকাশ্য মেঘ মধ্যে থেকে মূল আধারে
বিদ্যুচ্চমকাল।




*’সলপোয়া’ হিমালয়ের একটি গিরিপথ। স্থানীয় ভাষায় ‘সল’-এর অর্থ পিচ্ছিল ও ‘পোয়া’-র অর্থ পাখি।

প্রচ্ছদচিত্র সৌজন্য: www.pinterest.com