করতলে জাগে পীতঘুম


১.
আমি আর শাইলক

আমায় কিছু টাকা ধার দাও শাইলক
খুব সামান্য টাকা।
একটা পয়সা নেই হাতে।
চায়ের দোকানে বসে হেসেছিল শাইলক
আমার অ্যান্থনীও জন্ম ঘুরে ঘুরে আসে
সে আমায় প্রতি জন্মে ধার দেয়
আর আমি,
সুদ দিতে দিতে মরে যাই।




২.
হারাধন আর আমি

দশটি সন্তানের কেউ নেই আজ
দেশে দেশান্তরে পরিযায়ী শ্রমিকের
গল্পের মতো, কর্পূরের মতো তারা উবে গেছে
হারাধন আর তার বউ আজও বেঁচে আছে
এবং তারা বিশ্বাস করে
যত হাত বাড়বে তত রোজগার বাড়বে সংসারে
বউটা ফি বছর অন্তঃসত্বা হয়
তারা হাতে পায়ে একটু সবল হলে
কাঠ কাটতে যায় অরণ্যে, মাছ ধরতে যায় সাগরে
হারাধন আর আমি, আমার বউ আর হারাধনের বউ
অথবা অর্ধেক ভারতবর্ষ
আসলে একটাই পরিবার।




৩.
আমি আর প্লাতেরো

প্লাতেরোর সাথে দেখা হয়েছিল আমার
সে এখন বজবজের একটি ইটভাটায়
ইট বাহকের কাজ করে।
আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম,
তুমি প্রিয় হিমেনিথ আর রোমানিয়া ছেড়ে
এখানে জন্ম নিলে যে বড়?
তার পিঠে কষা দাগ, চোখের কোলে কালি।
সে আমার দিকে তাকিয়ে হাসল, বলল,
আমি আর হিমেনিথ দুজনেই ইটভাটায় কাজ করি
দুজনেই কবিতা লিখি।




৪.
রাখাল আর আমি

আমরা দুজনেই সরকারি কর্মচারী।
রাখাল ঘুষ দিয়ে চাকরি পেল প্রথম
তারপর আমিও ঘুষ দিলাম এবং… পেলাম।
রাখাল পড়াশুনো করত না, আর আমি করতাম।
এছাড়া কোনো পার্থক্য নেই আমাদের।

শুধু বিদ্যাসাগর মশাই বুঝলেন না!




৫.
আমি আর দমনক

কল্যাণী রোডের ধারে সে এখন বেওয়ারিশ
দিনের আলোয় ঘোরে আদাড়ে-বাদাড়ে।
একদিন দেখা হয়েছিল বাঁশবনে।
ম্রিয়মাণ ঝোপের আড়ালে।
আমাকে বলেছে সে,
মন্ত্রিত্ব চলে গেছে বহুকাল
তবু সে রাজার চোখে এখনও ফেরার।
সেই থেকে প্রতি রাতে হুক্কাহুয়া…
স্বজাতিরা একদিন সমবেত হলে
রাজার আসন যাবে টলে!




৬.
তথাগত আর আমি

তোমার জন্য দীর্ঘ অপেক্ষা রেখে,
আমি শুয়ে পড়ি আমার পাশে একসময়।
এরকম জন্মান্তর শয্যাযাপন করতে করতে
জাতক-জীবন পার করে—
এখন আমার জল-পুরুষ দশা!
এবার তুমি চাইলে ভেদ্য হও আমাতে
কিংবা সলিল সমাধির জন্য করযুক্ত হও এই দেহে—

একবার, সেরিবান সেরিওয়ালার জীবনে—
খর রৌদ্রে, আমি ইচ্ছে করে তথাগত সেজে
তোমার জন্য উৎপলবর্ণা!
ইচ্ছে করে দমন করেছি কাঞ্চন।
দুজন ফেরিওয়ালার মধ্যে কোনো পার্থক্য ছিল না

মনে করো,
শয়নের মধ্যে এইবার আসবে সে অলীক
অনেক হুল্লোড়ে, শব্দে,
যাদুটোনা করে যাবে হৃদয়ের মুরজ
তুমি একবার ভাবো, এই সময়,
সেই শৈলজ স্থাপত্যের কথা—
যেখানে খ্রিস্টপূর্বাব্দ রমণী হয়ে তুমি
লুম্বিনী উদ্যানে শুয়ে আছ, আর আমি?
অলীক হয়েছি চারপাশে

সামান্য মাংসের জন্য মৃত্যু হয়েছিল একবার
অথবা পরমান্নেও বিষাদ জেগেছিল
অগণিত মৃত্যু অন্ধকার যোনি জগদীশ
টপকে ডিঙিয়ে পরিখার অভ্যন্তর জীবনে তবু
এই মৃত্যু সুজাতার জন্য নয় বুঝি!
অনন্য হৃদয় কিছু অন্বেষার—মানবীর মতো কিছু
অথবা শুধুই মৃত্যু!
এই জল-পুরুষকে যদি তুমি জিজ্ঞাসা করো
তোমার মৃত্যু অন্ধকার যোনি জগদীশ ভেদ করে—
প্রশ্ন করবে সুজাতা,
তুমিই উত্তর হবে তোমার সুজাতার

তবে বারবার একই নির্মিতির মধ্যে
কীসের বিচরণ?
মাতা
মাতামহ
অথবা প্রমাতামহের শরীরে
আর একবার মায়াস্বপ্ন দেখাও নিজেকে

আমিও স্বপ্ন দেখি, পালটে ফেলছি শরীর
অগণন যোনির অন্ধকার, স্তনের সুঘ্রাণ
ধুয়ে ধুয়ে জমা হচ্ছে ক্রমপুঞ্জিত জন্মে
এক অন্য লুব্ধকে
অনন্ত সঙ্গমরত যৌনহীন দুই জন্মবাহক,
শত সহস্রবার আমাকে ফেরাল

তথাপি স্বপ্ন পোষো চোখে?
আমার এই জলের শরীরে,
এই ভেদ্যভূমিতে, সমগ্র তরলে?
আমি জানি, গতকাল আমার জন্মের সাথে
কোনো এক মাতামহ প্রগাঢ় ভালোবাসতে গিয়ে
শব হয়ে জন্মেছে ফের
সেই শব দাহ হলে আবার অঙ্গার হবো,
অঙ্গার থেকে শোক—
শোক থেকে ভালোবাসা হবো।

তোমার শরীরে এসে আত্মজন্ম বোধ করি ফের
বোধ করি তথাগত হয়েছি বিস্ময়ে
একবার ডাক দাও, শ্বেতহস্তী শ্বেত শতদল!
ঘুমিয়ে পোড়ো না মা’গো, ডাক দাও—
জল ভেঙে বার হয়ে আসি।




প্রচ্ছদচিত্র সৌজন্য: www.pinterest.com