ভিজে জলের কেচ্ছা
১.
শ্বেতপাথরের নারী আপনার পাশে
ভারী বর্তুল উন্মুক্ত স্তন
সামনে শান্ত দিঘির শান্ত জল
মুগ্ধ অপরাহ্ন
আপনি কাশ্মীরি আলোয়ান জড়িয়ে
বিপুল মন্থনে—
আপনার খ্যাতি যেন হাতির বয়স্ক নিতম্ব
মন টসটসে
আপনি তখনি সোনার কলমটি তুলে নিলেন
তবু আপনার কবিতায় এত কেন ভিজে জলের কেচ্ছা!
২.
চালু জাহাজের পিছনে ঘাঁটা জলের উতরোল
দেখে
মনটা আমার জল-ছল হয়ে যায়
তোমাকে দেখে যেমন ভিজে যায়
আমার আউল দহন!
গহনে জাগে ইছামতীর জলীয় মন্থন
গমন তবু
অপেক্ষাতুর
মর্মের বেদনা নবাঙ্কুর
তাই ভেবেছি ফুল নেবো না আর
তোমার জন্যে নেবো শুধু
এক আঁজলা সমুদ্দুর!
৩.
উৎসর্গ: রবার্ট ক্লাইভ
একশো বোঝাই নৌকা ভেসেছে জলে—কতদূর যাবে—যাবে বুঝি মহাদুর্গে—পালের টান তাই মোহনার দিকে নয়—বরং আরেক শহরের নিশ্ছিদ্র ঘেরাটোপে—জল বইছে উদাসীন—জলের হারামিপনায় আমরা ডুবেছি—না, জলকে গাল দিও না—জলের মহাব্রতে আছে সাগর মোহনা—জল-জন্ম সার্থক হবে সেখানে—আদতে আমাদের লোভী ন্যাকামি আমাদেরই দাস বানিয়েছে—বিদেশী প্রভুর কাছে বিক্রীত আমরা—অন্তর্ঘাতে পরাজিত নৃপতির তবু দরবারি বিলাস—জলে তিনবার আচমন করে উঠেছি হাতির পিঠে—তাঁবু পড়ে থাক—দেখিনি হাতির চোখও ভিজে—বুঝিনি এইটা চিরদিনের রসাতল—প্রভু হলেন সারা প্রতীচ্যের একমাত্র সম্পদ! লোকে বলে লুঠের কেচ্ছায় ভিজে আছে শ্বেতপাথুরে কীর্তি!
ভাইরাসে বাস্তব
১.
যেটা ভাবছি আমাকে জী-হুজুর বলতে হবে,
যেটা শুনছি আমাকে ল্যাজ নাড়তে হবে,
যেটা বুঝছি হাত কচলে দাঁত কেলাতে হবে,
যেটা ছুঁয়েছি সেটা পুলিশ রঙের দড়ি
যে-আওয়াজ শুনছি সেটা আমার পায়ের বেড়ি,
যেটা বুঝছি হাঁটু মুড়ে ন্যাংটো ছবি তোলাতে হবে,
ফের শুনছি পোষা দাসীর মতো রোজ-সঙ্গমে রোজই…
না-হলে প্রভুর গলায় জল গলবে না!
না-হলে প্রভুর অহং ভেজা তুলো!
মা’গো, তুমি দ্যাখো, দ্যাখো—
ফাঁসিতে ঝোলানোর পরও ওরা
আমায় কেমন চাবুক মারছে!
২.
এত কথা বলছেন কেন!
প্রথম কথায় বিষ মেশালেন
দ্বিতায় কথায় সবুজ মলম
আবার খানিকটা বিরতি নিয়ে
নাকে নস্যি গুঁজে
চিৎকার করে ভবিষ্যতের গর্ভে
ঢেলে দিলেন তেঁএটে বর্তমানকে
আমরা শ্রোতা। আমরা থ।
আমরা দেশের দীনদুঃখী
সংখ্যাগুরু মানুষজন: ঠাকুরের দয়া!
সকালে মুড়ি চা
দুপুরে মুড়ি শশা
রাতে সাবুজল
খাই…বাঁচি
মা’কে বলি, তোমার গোপালের সেবা পরজন্মে হবে
বউকে বলি, সবুর! পরজন্মে তুমি যমজ বিয়োবে
নিজেকে চুপিচুপি বলি: এখন ঢাউস বর্ষা—
কোপাইতে ঝাঁপালে আজই পরজন্ম!
প্রাজ্ঞ পুরোহিত আমার মুক্তির জন্যে যজ্ঞ করলেন,
দক্ষিণা-প্রণামীর মূল্য বুঝে নিলেন,
তারপর ঝোপের আড়ালে নিয়ে গিয়ে ফিসফিসিয়ে বললেন:
পরজন্ম হুস! ঠাকুরের পাতি রসিকতা!
৩.
তীব্র
রৌদ্র
ভেঙে
পড়ে
আমার
ছেঁড়া মাদুরে
মাদুরটি জ্বলে যায়
পোড়া মাদুর ছেড়ে
অতঃপর আমি বাইরে যাই
ফের রৌদ্র
এবার গা-টা পোড়ে
তখনি বুঝতে পারি
আমার সমাজধন্য ছদ্মবেশটি
নিয়ে পালিয়ে গেছে আমারই রক্ষিতা!
প্রচ্ছদচিত্র সৌজন্য: www.pinterest.com