বাড়ি ও পাখিপথ

এই বাড়ির ওপরে এক
  পাখিপথ আছে
যারা ব্যবহার করে তারা
  সকলের চেনা
যাওয়া-আসা রোজ খালি
  পেটে, ভরা পেটে
দৃশ্যের নাগালে থেকেও
  তারা চিরকাল
অন্তরাল অন্তরঙ্গ ছবি
  মালার আকারে
কিংবা তিরের ফলার মতো
  একমুখীনতা
পক্ষীজনতার কাছ থেকে
  শেখা এইসব
অধিবিদ্যা…আকাশ-সভ্যতা…

এই বাড়ি ধন্যবাদ দেয়
  অস্তি পৃথিবীকে…




মেট্রোপলিসের দুঃখ

চড়ুইপাখিরা কমে গেছে
এই দুঃখ মেট্রোপলিসে নেই
যদিও প্ল্যাকার্ডে পাখিছবি নিত্য
আঁকা হয়, আঁকা হয়
গাঢ় নীলাকাশ, আর মানুষের
প্রাণের প্রতীক ওই পক্ষীকুল…

আহা ! কেমন ছন্দের
অনুরক্ত এই নবীন শহর
শহুরে মনের ধারেকাছে নেই
এই কষ্ট, সেইসব
কচুবন নেই, জোনাকিরা নেই—
আকাশে হোর্ডিংগুলি
ডানা মেলে ওড়ে, ভূমাজ্ঞান—
দিব্যানুভবে মাতোয়ারা
পুরজন অঢেল আমানত
মানত করেছে লক্ষ মানুষের
মুণ্ড ঝুলিয়ে, প্রতীকী ব্যাখ্যা দিচ্ছে:
মানুষের মুণ্ড মহানুভব, মহাপ্রাণ,
দেবীর গলায় ঝোলে,
আর কোটি কোটি জীবন্ত মানুষ তার
      নিত্যপুজো করে…




নিরঞ্জনের পর…

নিরঞ্জন শেষ হলে
 প্রতিমার আড়া
  জলে পড়ে থাকে না
 যে পায় তার হয়ে
অপ্রতিম হয়ে ওঠে সে
 প্রতিমা তখন
  তার কেউ নয়
 কিছু নয় ক্ষণকাল
আগের জুলুস
 আর ভক্তিস্রোত
  শক্তিময়ীদের
ধুনোনাচ খেলার সিঁদুর…

নিরঞ্জন শেষ হলে
 জলের হৃদয়
  শান্ত হয়ে আসে
 জলে ফুল ভেসে থাকে
ভেসে যায় শোলার মুকুট
 তার সাথে মানুষের
  শতেক কামনা
 জ্বলন্ত প্রদীপ হয়ে
দিগন্তের নীচে
 কীভাবে বিলীন হয়ে যায়




পুতুল ও পেয়ালা

কাচের আড়াল থেকে
ভেসে আসে পুতুল ও পেয়ালা
দুই ছবি দুই দেশে থাকে,
দুই ঘরে শতেক ব্যঞ্জনা
        মর্ম ছুঁয়ে যায়…

রাজপথের দুই ফুটপাথ
ব্যস্ত থাকে হাত-পায়ের জঙ্গলে
কোনো চোখে থাকে পরকলা,
কোনো মুখে দয়ার আভাস…

দয়া বিক্রি করে তারা, পাথরের
গায়ে নিজেদের নাম কুঁদে নেয়
ফেস্টুন ঝোলায় সদরে-অন্দরে
প্রীতিসুলভতা বিক্রেতার সবচেয়ে
         বড় গুণ…

সুমিষ্ট ভাষার পেশাদার শিক্ষকের
আজ বড়ই চাহিদা, পুতুল ও পেয়ালার আজ
সবচেয়ে বড় খরিদ্দার তাহারাই,
মণ্ডপে গাঁয়ের ছবি দেখে-টেখে বিচারপতিরা
খড়ের শৌখিন চালার নীচে
কফির আসর জমায়…

পেয়ালারা ভেঙে গেলে এখনও
পুতুলেরা সবচেয়ে বেশি দায়ী
         হয়…




ভুলছি না…

সকলেই জড়ো আজ মাঠে
অনন্ত আদিম মন উজ্জীবিত
         আজ—
জলস্থল আমাদের, এর প্রাণময় কোষে
আমাদেরই বীজ, একে রক্ষা আমরাই করি,
এখানে ভেষজ নিত্য পুজো পায়,
এখানে দলন নেই, এই ক্ষেত্রে জীবধর্ম
জ্বালানি-নির্ভর নয়,
নিগড় যেটুকু আছে—স্বতশ্চলিষ্ণু, চক্ষুষ্মান,
         সমক্ষে চর্চিত…

সরল মার্জিত মন মাথা তুলতে চায়,
শতচক্ষু রাত জেগে আছি
ভিটে-পাহারায়,
শত্রু-বন্ধু একাকার, বিচার বিদ্বেষ-ভরা,
তাই পায়ের সতর্কে বীজ বাঁচিয়ে বাঁচিয়ে
এই মাঠে জড়ো হয়ে
সকলের কথা শুনছে পৃথিবী, যুদ্ধ
থেকে, শান্তির ছলনা থেকে মুক্তি চাই শুধু,
         আর কিছু নয়…

বকবৃত্তি ছাড়ো তুমি,
স্তোকবাক্য দিও না কখনও…




পুরাতনী

বিকল্প দেবো
এ সাহস ছিল না একেবারে…

সুরাহা দেবো
এ বিষয় ভাবিনি কখনও…

আশ্রয় দেবো
এ ছত্র ছিল না আমার…

বিশ্রাম দেবো
সুনিশ্চিতি ছিল না কোথাও…

আশ্বাস দেবো
শ্বাস-ঘাটতি ছিল তো কিছুটা…

আসন দেবো
ক্ষুদ্রজ্ঞানে ভরসা ছিল না…

সার্থক দেবো
আমারই তো অর্থ চুরি গেছে…

নিদর্শ দেবো
ভুয়োদর্শিতার ঘোরে মজে গেছি…

বিদায় দেবো
এ ক্ষমতা হবে না আমার…




প্রচ্ছদচিত্র সৌজন্য: www.pinterest.com